দ্বিতীয় দিনও কঠোর ভাবে চলছে পাবনায় লকডাউন
পাবনা প্রতিনিধি : সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের দ্বিতীয় দিনও কঠোর ভাবে চলছে পাবনার সর্বত্র। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। জেলা সদরে প্রবেশের মোড়ে মোড়ে তল্লাসী চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের টিম মোড়ে মোড়েসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও বাজারে টহল বাড়িয়ে ভ্রাম্যমান চালাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শহরের আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলিয়া মাদরাসা মোড়, ট্রাফিক মোড়, ইন্দারা মোড়, বীণাবাণী সিনেমা হল মোড়, পুলিশ লাইন, অনন্ত, বাস টার্মিনাল, বড় বাজারসহ শহর ও আশপাশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
শহরে গুরুত্বপূর্ণ কাজে কিছু অটোরিক্সা, রিক্সা, প্রাইভেট যানবাহন চলাচল করছে কড়া বিধিনিষেধের মাধ্যমে। এছাড়া শিশু খাদ্য, সবজি, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান খোলা রয়েছে। তবে শহরের বাইরে বেঁধে দেয়া সময়ে মুদিখানদসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের দোকান খোলা রয়েছে। অন্য দিনের তুলনায় জনমানুষের উপস্থিতি অনেকাংশে কম।
শহরের বিভিন্ন গলি ঘুরে দেখা যায়, দোকান পাট বন্ধ থাকলের দোকানগুলোর সামনে জটলা ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন বয়সী মানুষ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোবাইলে যোগাযোগ করে সাটার ও দরজা আটকানো থাকলের তালা খোলা রেখে কাস্টমারকে ভেতরে রেখে পন্য বিক্রি করা হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ী থেকে বের হওয়ার জন্য বিভিন্ন খোড়া অজুহাত অবলম্বন করেছেন মানুষজন। কেউ বাজারের ব্যাগ, কেউ ওষুধের প্রেসক্রিপশন, কেউবা ব্যাংকের চেক আবার কেউ বোতলে করে দুধ, কলা হাতে নিয়ে ঘুরছেন।
পুলিশ প্রশাসনের করোনা প্রতিরোধে তৎপরতা কর্মকান্ড চলাকালে অতি উৎসাহী মানুষ দেখার জন্য জড়ো হতে দেখা যায়। পুলিশ বাঁশি ফু দিয়ে আবার দাবড়িয়েও এদের নিয়ন্ত্রণে আনতে নাকানি চুবানী খাচ্ছেন। চেকপোস্ট গুলোতে বাইক ব্যবহারকারী ও ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা গুলো ঘর থেকে বের হওয়ার কারন সঠিক ভাবে বলতে না পারায় তাদের কেস দিয়ে জড়িমানা আদায় করছেন ট্রাফিক সার্জেন্টসহ দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা
আব্দুল হামিদ রোডে দেখা যায়, কিছু মানুষ জরুরী পন্য বা প্রয়োজন ছাড়া অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার সময়ে অটোরিকশা চালকগুলো পড়ছে ভাড়া তুলে মহাবিড়ম্বনায়। চেকপোস্ট গুলো থেকে তাদের রিকশার চাবি কেড়ে নিচ্ছে পুলিশ।
পাবনার পুলিশ সুপার মুহিবুল ইসলাম খান বলেন, মহামারী প্রাণঘাতি করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারী সিদ্ধান্তেই লকডাউন চলছে। আমরা চেষ্টা করছি লকডাউন সফল করতে। যারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন তাদের যাচাই বাছাই করে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে আইনগত পদক্ষেপ। আমরা বারবার সর্তক করছি বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হয়ে করোনা মোকাবেলায় সহায়তা করুন।
জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, লকডাউন একক বা ব্যক্তিগোষ্ঠির জন্য নয়। সরকার জনসাধারনের কল্যানে, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচাতে এ উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। আমরা জন মানুষের জন্য করোনা প্রতিরোধ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক কাজ করছি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়নে আমরা সকলের সহযোগিতা চাই। সুন্দর ভাবে বাঁচতে হলে আমাদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। যারা শুনবেন না, মানবেন না, তাদের বিরদ্ধে আমরা কঠোর হতে বাধ্য হবো। এদিকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জেলা তথ্য সার্ভিস ও পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রচার প্রচারনা অব্যাহত রয়েছে।
তবে দিনমজুর শ্রেণীর মানুষগুলোর জন্য এই লকডাউন কিছুটা কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তারা কর্মহীন হয়ে বাড়িতে অবস্থান করছে। মাটকাটা শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী, রিক্সা ও অটোওয়ালা, দিনমজুরসহ বিভিন্নজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা প্রতিদিন কাজ করি হাজিরায়। হয়তো দুএকদিন কাজ না করলেও চলতে পারবো। কিন্তু তারপর কি হবে। পরিবার পরিজন নিয়ে কিভাবে চলবো। এটা নিয়ে আমরা খুব সঙ্কার মধ্যে আছি। তারা বলেন, রমজান মাসে খরচটা একটু বেশি। তারপর সামনে ইদ।
সব মিলিয়ে বিষয়টি তাদের খুব দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ভাড়ায় চালিত সিএনজি চালক, ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা ও রিক্সা চালকরা বলছেন, লকডাউনে ভাড়ায় বের হতে পারছি না। কোন মালিক মানছেন আবার কোন মালিক মানতে নারাজ হওয়ায় তাদের সাথে কথা-কাটাকাটি হচ্ছে।