সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে সতর্ক আওয়ামী লীগ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সরকার পতনে নানামুখী ষড়যন্ত্র হচ্ছে- দীর্ঘদিন ধরেই এ রকম আশঙ্কার কথা বলে আসছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। বিএনপি-জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের নীলনকশার রূপরেখা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন তারা। এমন আশঙ্কার মধ্যেই সরকার উৎখাতের কথা প্রকাশ্যেই আনলেন স্বয়ং দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জন্ম দিয়েছে নানা আলোচনার। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, ষড়যন্ত্র চললেও, অতীতের মতো তা এবারো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আর ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে বিএনপি নেতাদের দাবি, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র বলতে কিছুই নেই, হতাশা থেকেই সরকারপ্রধান এমন বক্তব্য দিচ্ছেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এ আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দল পরিচালনার আহ্বান বিশ্লেষকদের।

প্রসঙ্গত; গত বুধবার কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রায়ই দেখি আমাদের দেশে কিছু নেতা খুব আন্দোলনের জন্য ব্যস্ত। তাদের আন্দোলন- এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. কামাল হোসেনের একটা অংশ। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি, বাম দল- বাসদসহ আরো কেউ কেউ। তারা প্রায়ই বলে সবাই এক হয়ে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে হঠাবে। আমার প্রশ্ন অপরাধটা কি আওয়ামী লীগের?

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সত্যই বলেছেন। এটা সবার জানা, বিএনপি-জামায়াতসহ কিছু রাজনৈতিক দল সব সময়ই দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। সামনে নির্বাচন। ষড়যন্ত্র আরো বাড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করার জন্যই এ কথা বলেছেন। এতে আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদেশেই সতর্ক থাকবে। ষড়যন্ত্রকারীরাও ব্যর্থ হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেসব দল ও ব্যক্তির নাম বলেছেন, তাদের সবার মুখোশ বহু আগে থেকেই উন্মোচিত। জনগণের বিপদে তাদের দেখা মিলে না। কিন্তু ক্ষমতায় যেতে ঠিকই তারা এক হয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এভাবে সরকারের পটপরিবর্তন করতে চায়। বিদেশিদের কাছে ধরনা দেয়, তাবেদারি করে, লেজুরবৃত্তি করে। দেশের বদনাম করে। বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তির সঙ্গে এদের আঁতাত। এরা ষড়যন্ত্রের পথেই হাঁটছে। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী এই কথা বলেছেন। তবে তাদের ষড়যন্ত্র অতীতের মতোই ব্যর্থ হবে।

এ নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির নেতারাও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সিনিয়র একজন নেতা ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র বলতে আসলে কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের দুটি কারণ হতে পারে- একটি হলো তিনি হতাশা থেকে বলতে পারেন; নানা কারণে সরকারের প্রতি নানা দিক থেকেই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আরেকটি হলো বিএনপিসহ সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো কিভাবে চাপে রাখা যায়; যাতে সরকারের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আমরা মাঠে নামতে না পারি। প্রয়োজনে নানা ইস্যুতে আরো মামলা, গ্রেপ্তার বা জেলে নেয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা সহজ হয়। তারা ক্ষমতাকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারবে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পাল্টা জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয়, দেশ পরিচালনায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। দেশে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তারা প্রতিষ্ঠা করতে পানেনি। দেশের মানুষ দাবি তুলেছে এই মুহূর্তে এ সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

যার নাম নিয়েও প্রধানমন্ত্রী কথা বলেছেন, তাদের একজন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি আমার নাম উল্লেখ করেছেন। হ্যাঁ, এই সরকার অনির্বাচিত বলেই আমি পতন চাই- এটা প্রকাশ্যেই বলি। আমরা গণতন্ত্র চাই। এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। প্রধানমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের কথা বলেছেন, কিন্তু তিনি তো (কামাল সাহেব) অসুস্থ। কারো সঙ্গে দেখা করছেন না, কথা বলছেন না। কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তিনি নেই। তিনি কীভাবে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করবেন? আর বাম দলগুলো তো তাদের হরতালে বিএনপির সমর্থনও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের বক্তব্য আমরা কারো ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবো না। তাহলে বাম দলগুলো কিভাবে আমাদের সঙ্গে মিলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। আমি মনে করি হতাশা থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথার সারমর্ম অবশ্যই আছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খোঁজ রাখেন দেশের কে কী করছেন। আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থেই কথা বলে থাকেন। তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকলেও, প্রকাশ্যে বলবেন না- এটাই স্বাভাবিক। একটা গণতান্ত্রিক দেশে গণতান্ত্রিকভাবেই সব কিছু চলবে। জাতীয় নির্বাচন আসছে। নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে পরবর্তী ৫ বছর কারা দেশ শাসন করবে। বর্তমানের একটি রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েই দেশ চালাচ্ছে। সেই দলকে উৎখাত করা বা সরিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র গণতন্ত্রকামী মানুষ কখনো মেনে নেবে না।

এটা স্বীকার করতে হবে, এদেশের মানুষ সব সময়ই গণতন্ত্রমনা। সব দলের উচিত গণতান্ত্রিকভাবেই রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানো। তারা সরকারে আসতে চাইবে, সরকারের পরিবর্তন চাইবে- সবই করতে পারে। তা অবশ্যই হতে হবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সেখানে কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের স্থান থাকতে পারে না। তিনি বলেন, এদেশে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট যেমন ঘটেছে। তেমনি ৩রা নভেম্বর ঘটেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাও ঘটেছে। কাজেই যতই অস্বীকার করা হোক না কেন, কোনো না কোনোভাবে ষড়যন্ত্র চলছেই। সেই জায়গায় সবাইকে সতর্ক থাকা উচিত। রাজনৈতিক নেতাদেরও উচিত ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের জায়গা থেকে দূরে সরে এসে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক পথে নিজের দল পরিচালনা করা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.