মেট্রোর মতো আংশিক চালু হবে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ। এর মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা অংশটি চলতি বছরের আগস্টে চালুর লক্ষ্য রয়েছে রেলওয়ের। যদিও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ অংশটির সার্বিক অবকাঠামোর কাজ এ সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয়। বাকি থেকে যাবে সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপন, স্টেশন ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো। সেক্ষেত্রে সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত আরেক প্রকল্প (ফাস্ট ট্র্যাক) মেট্রোরেলের মতোই আংশিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথ।
আংশিকভাবে গত ডিসেম্বরে চালু হয় মেট্রোরেল। শুরুতে কেবল উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত শুরু হয় মেট্রোরেল চলাচল। এরপর একে একে খুলে দেয়া হয়েছে মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর এবং কাজীপাড়া স্টেশন। মতিঝিলের পুরো অংশ চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রোর মতোই কয়েকটি অংশে বাস্তবায়ন হচ্ছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। তিন অংশে বিভক্ত প্রকল্পের প্রথম অংশ ঢাকা-মাওয়ার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৮ কিলোমিটার। এ অংশে কেরানীগঞ্জে একটি নতুন স্টেশন তৈরি হচ্ছে। দ্বিতীয় অংশ মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ কিলোমিটার। এ পথে নতুন স্টেশন রয়েছে পাঁচটি। লুপ লাইন হিসাবে নিলে এ দুই অংশের মোট রেলপথ দাঁড়ায় ৮২ কিলোমিটারে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার দিন থেকেই ট্রেন চলাচলের জন্য মাওয়া-ভাঙ্গা অংশটির কাজে বাড়তি গুরুত্ব দেয় রেলওয়ে। কিন্তু কাজ শেষ করতে না পারায় এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে চলতি বছরের জুনের মধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গার বদলে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর কথা জানিয়েছেন রেল খাতের নীতিনির্ধারকরা। বর্তমানে এ সময়সীমা আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়ে ট্রেন চলাচল শুরুর কথা বলছেন তারা।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। চলতি সপ্তাহেই রেল ভবনে প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধি দল রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে মন্ত্রী আগস্টের মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর জন্য সিআরইসির সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষও আগস্টের মধ্যে এ অংশ চালুর লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বণিক বার্তাকে জানিয়েছে। যদিও এখনো প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশে রেলপথ বসানোর কাজ বাকি রয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগস্টের মধ্যেই রেলপথ বসানোর কাজটি শেষ হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৫০ কিলোমিটারের মতো কাজ শেষ হয়েছে। এ অংশে রেলপথ বসানোর কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। আগস্টের মধ্যেই পুরো অংশে রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’
বিস্তারিত নকশা ও ঠিকাদারের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মিত ঢাকা-যশোর রেলপথের স্টেশনগুলোয় স্থাপন করা হবে কম্পিউটার-বেজড ইন্টারলকিং (সিবিআই) সিগন্যাল ব্যবস্থা। ফলে আগস্টের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে রেলপথ বসানোর কাজটি শেষ করতে পারলেও সিগন্যাল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন। সিগন্যাল ছাড়া ট্রেন চলাচল কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগস্ট নাগাদ আমরা হয়তো ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চালাতে পারব। কিন্তু সিগন্যাল ব্যবস্থার কারণে সব স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতি দেয়া সম্ভব হবে না। আবার ভাঙ্গার আইকনিক স্টেশন ভবনসহ এ অংশের স্টেশন ভবনগুলোর অবকাঠামোর কাজ যেহেতু শেষ হবে না, সেহেতু চাইলেই আমরা সব স্টেশনে ট্রেনের যাত্রাবিরতি দিতে পারব না। তবে অবকাঠামো ও সিগন্যাল ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর আমরা পর্যায়ক্রমে স্টেশনগুলোয় যাত্রাবিরতি দেয়া শুরু করতে পারব।’
আগস্টে ট্রেন চালানোর যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেটা কি বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচলের জন্য, নাকি পরীক্ষামূলক, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের সিদ্ধান্ত। আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই কাজ এগিয়ে নিচ্ছি।’
প্রকল্পের শেষ অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত। এ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৩ কিলোমিটার। স্টেশনের সংখ্যা ১৪। প্রকল্পের মেয়াদ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পুরো রেলপথটি চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথটিতে কী পরিমাণ যাত্রী ও পণ্য পরিবহন হতে পারে, তার একটি বিশ্লেষণ এরই মধ্যে তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি। স্বল্পমেয়াদি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সাল নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানি অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানি-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন। এ সময়ের মধ্যে ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বছরে ৪০ লাখ, ভাঙ্গা-কাশিয়ানি অংশে বছরে ১৭ লাখ ও কাশিয়ানি-যশোর অংশে বছরে সাড়ে ১৩ লাখ যাত্রী পরিবহন করা হবে। ‘ওয়ান-ডিরেকশন’ বা একমুখী চলাচলের ওপর ভিত্তি করে এ প্রাক্কলন তৈরি করেছে সিআরইসি।