সভাপতিকে বাদ দিয়েই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন, সভাপতি-সম্পাদক হতে চান বিতর্কিতরা

0

নিজস্ব প্রতিবেদক: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সম্মেলন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে আয়োজন করা হয়েছে দলের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী লীগের আদর্শের প্রশ্নে আপোষহীন থাকার কারণেই একটি স্বার্থান্বেষী মহল গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিতর্কিতদের নেতৃত্বে আনতে এই ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, বিএনপি সরকারের সময়ে নানা অত্যাচার, নির্যাতনের শিকার জনপ্রিয় এই আওয়ামী লীগ নেতা কারাগারে থেকেও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বারবার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। আবুল কালাম আজাদ তার আপোষহীন এবং সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের আধিপত্যকে রুখে দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাকে আওয়ামী লীগের দুর্জয় ঘাটিতে পরিণত করেছেন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে তাকে সরিয়ে দিলে জামায়াত-বিএনপি চক্র আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, আজ (১৮ জুন)অনুষ্ঠিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও তাকে সম্মেলন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বিরুকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। মূলত কয়েকজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বসাতে তাকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। তারা জানান, এবারের সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র আতাউর রহমান সরকার । যার বাবা বাবা ছিলেন জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত জাগো দলের গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রধান। সে সময় তাদের বাড়িতেই জাগো দলের অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। আতাউর রহমান সরকারও ছাত্রজীবনে গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের জাসদ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।
গোবিন্দগঞ্জ পৌর মেয়র থাকাকালে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার দুই কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কথা সংবাদপত্রের শিরোনাম ছিল। সদ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও আতাউর রহমান সরকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে ভায়রা সৈয়দ শরিফুল ইসলাম রতনের পক্ষে কাজ করেছেন। ১৯৮৬ সালের মোটরসাইকেল চুরির এক মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড হয় আতাউর রহমান সরকারের। স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, ত্যাগী এবং পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির লোকদেরকে বাদ দিয়ে, এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তি নেতৃত্বে আসলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়বেন।

এবারের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান।আব্দুল লতিফ প্রধান দুদকের দায়ের করা ধর্মীয় সভার জন্য বরাদ্দ চাল কালোবাজারে বিক্রি করে প্রায় ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের এক মামলার আসামি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে আব্দুল লতিফের বহিষ্কার চেয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। তার অপকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে দরখাস্ত দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, সাধারণ সম্পাদক বরাবর।
সর্বশেষ গত মে মাসে আব্দুল লতিফকে দল থেকে বহিষ্কার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুন্সি রেজওয়ানুর রহমান।

ওই সংবাদ সম্মেলনেও তিনি জানান, আব্দুল লতিফ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তাকারী ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বাবা পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন , এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আমলে গ্রাম সরকার প্রধান ছিলেন। শুধু তাই নয়, আব্দুল লতিফ প্রধানের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জে মানবতাবিরোধী অপরাধ কার্যক্রম তদন্তে বাধা দেয়া, আসামির পক্ষে অবস্থান নিয়ে লোকজন দিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে বিরত থাকার জন্য বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করা, মানবতাবিরোধী অপরাধের তথ্য-উপাত্ত বিনষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে মামলার তদন্ত কাজ বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

এ ধরনের বিতর্কিত ব্যক্তিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসলে গোবিন্দগঞ্জ আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে মন্তব্য করেছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.