প্রতারনাপূর্বক টাকা আত্মসাত, মিথ্যা মামলা, চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের হোতা প্রতারক মাজেদকে খুঁজছে গ্রামবাসী
বার্তা সংস্থা ইউএনএস : প্রতারনাপূর্বক টাকা আত্মসাত, মিথ্যা মামলা, চেকজালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। এব্যাপারে গ্রামে সালিশ বৈঠক হলেও উপস্থিত হোননা প্রতারকচক্রের মূল হোতা মাজেদ ওরফে মাসুদ। তাঁর যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ সকলেই। তাকে খুজছে গ্রামবাসী। জানা যায়, চাটমোহর উপজেলার ফৈলজনা ইউনিয়নের রিফুজি পাড়ার মৃত রইজ উদ্দিনের একমাত্র পুত্র মাজেদ ওরফে মাসুদ(৪০)। গ্রামবাসী জানায়, তাঁকে কখনও কোন কর্ম করতে দেখা যায় না। অনেক আগে ফৈলজনা বাজারে টিউবওয়েলের মাথা চুরি করে ধরা পরায় তাকে গ্রামবাসী ধরে চাটমোহর থানায় সোপর্দ করে। ফৈলজনা বাজারে ২০-২৫ জন মিলে একটি সমিতি খোলে সেই সমিতির প্রায় ৫ লক্ষ টাকা তিনি আত্মসাত করে চড়ামূল্যে সুদে কারবারি শুরু করেন। সেই থেকে তাঁর নাম হয় সুদে মাজেদ।
গ্রামবাসী জানায় তাঁর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দুই জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। সেই সময় মাজেদ কৌশল পালিয়ে যায়। এছাড়াও সে ১ ট্রাক চিনি চুরির আসামী । সেই মামলা এখনও চলমান। জানা যায়, টেকপাড়ার সুমনের সাথে মাজেদের ঘনিষ্ঠতার কারনে মাজেদ সুমনকে দিয়ে এনজিও থেকে ৩ লক্ষ টাকা লোন তোলে। যা পরিশোধ করার কথা ছিল মাজেদের। কিন্তু টাকা নেয়ার পর মাজেদ পলাতক। এদিকে এনজিওর চাপ সহ্য করতে না পেরে সুমন গ্রাম প্রধানদের বলেল দের লক্ষ টাকা দিতে রাজি হয়। পরে সুমন তাঁর বন্ধু জগলুর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা হওলাত চাইলে জগলু একটি ব্লাঙ্ক চেক নেয়ার মাধমে সুমনকে ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয় । সেই চেক মাজেদ দেখার নাম করে পালিয়ে যেয়ে পাবনা আদালতে সুমনের বিরুদ্ধে ৩ লক্ষ টাকার চেক জালিয়াতির মামলা করেন। এবং মাজেদ ১ ট্রাক চিনি চুরি মামলার আসামী হওয়ার ১ বছর পর অজ্ঞাত কারনে সুমন ঐ চিনি চুরির মামলার আসামী হন।
গোরুড়ী আর্যপাড়ার আমীনের কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা হাওলাত নেয় মাজেদ। লোকমানের কাছে বাড়ি বিক্রি করে টাকা শোধ দেবে এই মর্মে। এখন পর্যন্ত সেই টাকা দেয় নাই। গোরুড়ী বাজারে জগলু মাজেদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু জগলুর কাছে টিভিএস আরটিআর মোটসাইকেল বিক্রি করে ৭০ হাজার টাকায়, পরে রেজিষ্ট্রি করে দেবে বলে। কিন্তু কয়েকদিন পর মাজেদের স্ত্রী নোওমুসলিম কৃষ্ণা ওরফে ফাতেমা আটঘরিয়া থানা গিয়ে জগলুর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও মটরসাইকেল চুরির অভিযোগ করেন। পরে জগলু আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র রতনকে দিয়ে আপোষ মিমাংসা করেন এবং মাজেদ হাজির হতে বললেও সে হাজির হন নাই। মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর আস্থাভাজন চাটমোহর উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্ঠান ঐক্যপরিষদের সভাপতি সুবল মন্ডল ইউএনএস প্রতিবেদককে জানান, মাজেদ বাহিনীর প্রধান মাজেদ আমাকেও চাঁদা দাবী করে হুমকি প্রদর্শন করেন। বিষয়টি থানায় লিখিত অভিযোগ না জানিয়ে মৌখিক ভাবে জানানো হয়।
সর্বশেষ ফৈলজনা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মীম ভেটোনারির মালিক লোকমানের নিকট তার বাড়ি সাড়ে নয় লক্ষ টাকায় বিক্রি বাবদ চার লক্ষ টাকা নিয়ে বায়নানামায় রেজিষ্ট্রি করে এবং পরবর্তিতে সাড়ে নয় লক্ষ টাকা নেয়। এবং ৯ ডিসেম্বর ২০২০ চাটমোহর রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি করবে বলে লোকমান উপস্থিত হলেও মাজেদ আর উপস্থিত হন নাই। পরে এবিষয়ে গ্রামপ্রধানদের জানালে তাঁরা এবং মাজেদ লোকমানকে বাড়ি দখলনেয়ার অনুমতি দেয়। লোকমান ঐ বাড়িতে বাসবাস শুরু করে কিছু দিনপর লোকমানের স্ত্রী ফাতেমা চাটমোহর থানায় অভিযোগ করেন আমার স্বামী লোকমান থেকে সুদে টাকা নিয়ে শোধ দিতে না পেরে বাড়ি দখল করে নিয়েছে। এঘটনায় লোকমান ফৈলজনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিনের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। গত ৮ এপ্রিল ফৈলজনা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সালিশ বৈঠকে উপস্থিত গ্রামবাসী সবাই জানান লোকমান সুদে ব্যবসায়ী নন এবং মাজেদ তার কাছ থেকে বাড়ি বিক্রয় বাবদ টাকা নিয়েছে স্বীকার করেন। এবং লোকমানে সঙ্গে মাজেদের ফোনালাপ রেকর্ডিং শোনান এতে শোনা যায় মাজেদ নিজেই বাড়ি দখল নিতে বলে এবং যে কোন দিন রেজিষ্ট্রি করা হবে। পরে সালিশনামায় সিদ্ধান্ত হয় যে যে অবস্থানে আছে সেটাই বহাল থাকবে।
সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফৈলজনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ উদ্দিন, শরৎগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্য এসআই শহীদুুুল ইসলমা, ২ নং ওয়ার্ড মেম্বর মাহাবুবুর রহমান মাবুল, ৩নং ওয়ার্ড মেম্বর হরুনুর রশিদ হারান, ১.২ ও ৩ নং সংরক্ষিত ওয়ার্ড মেম্বর মাবিয়া খাতুন ভানু, সমাজ সেবক হায়াত আলী মন্ডল, রিফাত আলী, ফজলু মেলেটারী, নাসির উদ্দিন পাখি প্রমূখ। এর পরেও মাজেদের স্ত্রী ফাতেমা বিভিন্ন মহলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। লোকমানের কাছে বাড়ি বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করবে বলে রেজাউল আমিনসহ বিভিন্ন লোকের কাছ টাকা নিয়েছে অভিযোগ উঠেছে। এই জন্যই খুঁজছে গ্রামবাসী প্রতারক মাজেদকে । জানা যায় প্রতারক মাজেদ এখন পাবনা শহরের চেতনের মোড় এলাকায় রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করছেন।