ঈশ্বরদীতে গৃহবধুকে গলা কেটে হত্যা : ২ আসামির স্বীকারোক্তি
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: ঈশ্বরদীতে মুক্তি খাতুন রিতা নামের এক গৃহবধূকে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যা মামলায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ২ যুবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার বিকেলে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন মাহাবুল সরকারের ছেলে শরীফ সরকার (২০) এবং কামাল সরদারের ছেলে হেলাল সরকার (২২)। তাদের বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল চরগোবিন্দপুর গ্রামে। ঈশ্বরদী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে দুইজনকে বড়াইগ্রাম উপজেলা
থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে চান। শুক্রবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী-২ এর হাকিম আশরাফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, রিতার স্বামী বায়োজিদ সারোয়ার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি করেন। সেই সুবাদে বায়োজিদের নানার বাড়ির এলাকার সাব্বির নামে এক যুবককে প্রকল্পে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা নেন নিহত গৃহবধূ। কিন্তু তাকে একাধিকবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়না। এতে সাব্বির টাকা ফেরত চাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিতো ওই গৃহবধূ। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে সাব্বির তিনজন চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীদের নিয়ে হাজির হয়ে পরিকল্পিত ভাবে গৃহবধূ রিতাকে গলা কেটে হত্যা করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ গৃহবধুর বাসা থেকে চাকুরি প্রত্যাশীদের কিছু জীবনবৃত্মান্ত উদ্ধার করেন। নিহত গৃহবধুর শাশুড়ি নিলিমা খাতুন বেনু জানান, ঘটনার দিন বেলা ১১টার সময় চার যুবক চাকরির জন্য বাড়িতে আসে। বায়োজিদ সেই সময় বাজারে থাকায় ড্রয়িং রুমে বসিয়ে তাদের আপ্যায়ন করেন তাঁর বউমা মুক্তি খাতুন রিতা। সে সময় তিনি তার ঘরে কোরআন পড়ছিলেন। হঠাৎ হত্যাকারীরা তার ঘরে ঢুকে গলা টিপে ও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। সে সময় তিনি চিৎকার করলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। পরে তিনি পুত্রবধূর ঘরে গিয়ে তার গলা কাটা লাশ পরে থাকতে দেখেন। হত্যাকারীদের মধ্যে তিনি একজনকে চিনতে পারেন। তার নাম সাব্বির। বাকিদের মুখে মাস্ক থাকায় তিনি চিনতে পারেনা।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, গৃহবধূর বাড়িতে আসা চারজন ব্যক্তিকে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে মাঠে নামে পুলিশ। এক পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকান্ডে ৪ জনের সম্পৃক্ততার বিষয় পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরী দেয়ার জন্য টাকা লেনদেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়েছে।
উপজেলা সদরের মশুড়িয়াপাড়া মহল্লায় নিজ বাড়িতে ঢুকে বৃহস্পতিবার দুপুরে মুক্তি খাতুন রিতা নামের ওই গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর শাশুড়ি নিলিমা খাতুনকে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। লোমহর্ষক এ হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা মোজাফফর হোসেন শুক্রবার বাদী হয়ে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।