বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে ২৪ তামাক বিরোধী সংগঠনে সংবাদ সম্মেলন ক্ষতিকর তামাকের মূল্য ও কর বাড়িয়ে, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যে ভর্তুকির আহবান
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : মাননীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবে তামাক ব্যবহার কমাতে এবং রাজস্ব বাড়তে কর বৃদ্ধির সুপারিশ করার কথা বললেও, প্রকৃত পক্ষে নিম্ন ও মধ্যমস্তরের সিগারেট, বিড়ি, জর্দা এবং গুলের দাম ও শুল্ক না বাড়ায় এবং একইসময়ে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির বিবেচনায় এসব তামাকজাত দ্রব্য আগের বছরের তুলনায় আরো সস্তা ও সহজলভ্য হয়েছে। এর ফলে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষত কিশোর, তরুণ, নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়িয়ে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যরত ২৪ টি তামাক বিরোধী সংগঠন। সেই সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং কর বৃদ্ধির প্রস্তাব সুপারিশকারী ১৫৪ জন জনপ্রতিনিধিকে অভিনন্দন জানিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (৮ জুন ২০২১) বেলা ১১টায় ভার্চুয়াল মিটিং প্লাটফর্ম ‘জুম’ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই আহবান জানায়। বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যে মূল্য ও কর প্রস্তাবের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিগারেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে প্রায় ৭২ ভাগ মানুষ। নিম্ন ও মধ্যমস্তর মিলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৮৪ ভাগ। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন ও মধ্যমস্তরের সিগারেটের দাম ও কর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চ এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের দাম যথাক্রমে ৫ টাকা (৫.২%) এবং ৭ টাকা (৫.৫%) বৃদ্ধি এবং ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখা হয়েছে। এর ফলে শলাকাপ্রতি সিগারেটের দাম উচ্চ স্তরে মাত্র ৫০ পয়সা এবং প্রিমিয়াম স্তরে মাত্র ৭০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়েছে। এক বছরে মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সকল তামাকজাত দ্রব্যের প্রকৃতমূল্য আগের বছরের তুলনায় কমে গিয়েছে। এর ফলে বর্তমান ব্যবহারকারীরা তামাক ব্যবহারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে এবং কিশোর-তরুণরা তামাক ব্যবহার শুরু করতে উৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক ও বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের সঞ্চলনায় সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ হিসাবে মতাতম ব্যক্ত করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপি’র কনভেনর ড. রুমানা হক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দীন আহমেদ, তামাক বিরোধী নারী জোটের সমন্বয়কারী ফরিদা আকতার, দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের হেলথ সেক্টরের ডিরেক্টর ইকবাল মাসুদ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নাজিম উদ্দিন আহমেদ এবং প্রজ্ঞা’র হেডঅব প্রোগ্রাম হাসান শহরিয়ার। তাঁরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রবর্তন না করে করারোপে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল রাখায় সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে এবং ক্রটিপূর্ণ করকাঠামোর কারণে এই দাম বৃদ্ধির একটা অংশ তামাক কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। ফলে তারা প্রাণঘাতি পণ্য বিপণনে আরো উৎসাহিত হবে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অথচ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করলে সরকার অতিরিক্ত ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব পেতো যা করোনা মহামারি সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ব্যবহার করা সম্ভব হতো।
বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও উক্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কোনো প্রতিফলন নেই। বক্তারা নিম্ন, মধ্যমস্তরের সিগারেটসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ এবং মুদ্রাস্ফিতির সাথে সামঞ্চস্য রেখে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেন।
এইড ফাউন্ডেশন, আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), বিসিসিপি, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো, ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ অব সোসাইটি (ডাস), ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন ফর রুরাল পুওর, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, প্রজ্ঞা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিজান (সুপ্র), তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), টোব্যাকো কন্ট্রোল এন্ড রিসার্চ সেল, উন্নয়ন সমুন্নয়, ভয়েস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট ও ইপসা সাম্মিলিতভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।