বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানি অস্বাভাবিক হ্রাস
৫টি ইউনিটের স্থলে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ১টিতে, যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ উৎপাদন
কাপ্তাই প্রতিনিধি : কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে আনা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫টি ইউনিট সচল থাকলেও হ্রদে পানি কম থাকায় বর্তমানে ১টি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর বর্তমানে চলছে ভরা বর্ষা মৌসুম আষাঢ় মাস। কিন্তু আষাঢ়েও বৃষ্টির দেখা নেই এখনো। বৃষ্টি না থাকায় হ্রদের পানিও বাড়ছে না। এই ভাবে আর সপ্তাহ খানেক চললে পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, কাপ্তাই লেকে বর্তমানে পানি রয়েছে ৭৪ ফুট মীন সি লেভেল (এমএসএল)। রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে পানি থাকার কথা ৮০ ফুট এমএসএল। নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে ৬ ফুট এমএসএল পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে শঙ্কট তৈরি হয়েছে। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি জেনারেটর চালু থাকলে ২৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১টি জেনারেটর সচল থাকায় বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট মাত্র।
কাপ্তাই হ্রদে পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের। তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়ার কারণে ৫টি জেনারেটরের মধ্যে ১টি জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর ৪টি জেনারেটর সচল থাকলেও তা চালু করা যাচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হ্রাস পাচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি সুত্র জানায়, বৃষ্টির পানির উপর নির্ভরশীল কাপ্তাই হ্রদ। বৃষ্টি হলে লেকে পানি বাড়বে। এছাড়া ভারত সীমান্তেও যদি বৃষ্টিপাত হয় সেই পানিও বিভিন্ন চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কাপ্তাই হ্রদে এসে পড়ে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্তেও বৃষ্টিপাত নেই। তাই হ্রদের পানি বাড়ছেনা। বৃষ্টি অথবা সীমান্ত থেকে হ্রদের পানির ধারা না আসলে কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির কোন সুযোগ নেই।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সুত্র জানায়, বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে তার পুরোটাই জাতীয় গ্রীডে সঞ্চালন করা হচ্ছে। পানি কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছেনা। কাপ্তাই হ্রদের পানি যদি ৬৮ ফুট এমএসএল এর নীচে নেমে আসে তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৬২ সালে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবার পর থেকে এ পর্যন্ত পানির অভাবে ৬বার বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছিল। তবে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন যে কোন মুহুর্তে ভারী বর্ষন শুরু হবে। টানা ৩দিন ভারী বৃষ্টি হলে কাপ্তাই হ্রদে পানি সঙ্কট দুর হবে। এখন সবাই আকাশের দিকে চেয়ে আছেন কখন ভারী বৃষ্টি হবে এই অপেক্ষায়।