অভয়নগরে নদীভাঙ্গনে বিলুপ্তির পথে মসজিদসহ শত শত বিঘা জমি
সোম মল্লিক যশোর প্রতিনিধি : প্রবাদে আছে ‘নদীর এ-কুল ভাঙ্গে আর ও-কুল গড়ে’। কথাটি পুরোপুরি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে অভয়নগরের ভৈরব নদের বিস্তৃত অংশে। যশোরের অভয়নগরের ভৈরব উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের দেয়াপাড়া থেকে শুরু করে সিদ্দিপাশার জয়রাবাদ পর্যন্ত নদীগর্ভে শত শত বিঘা জমি ভাঙ্গনে নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ভুমিহীন ও গৃহহারা হয়েছে কয়েকশত পরিবার। তারই ধারাবাহিকতায় যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া বাজারের পূর্বপ্রান্ত থেকে ভুগিলহাট শীতেরঘাট পর্যন্ত ভৈরব নদের ভাঙ্গন এত তীব্র যে, এখানে প্রায় অর্ধশত পরিবারের অর্ধশত একর জমিসহ নদ বরাবর একটা রাস্তা পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং ঈদগাহ এখন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। মাত্র ১০ ফুট ভাঙ্গলেই মসজিদটা এবং ঈদগাহ বিলীন হয়ে যাবে।
গ্রামবাসী গ্রাম থেকে বাঁশ কালেকশান করে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এটা মনের সান্তনা ছাড়া আর কিছুইনা। এই অংশটুকু নদীর বাঁক থাকায় জোয়ার ভাটার সময় উভয়দিক থেকে পানির স্রোতে ভাঙ্গন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রতিদিন জমি ভেঙ্গে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোল্যা মনিরুল ইসলাম বলেন, দিন গেলেই ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। আমরা গ্রামবাসীরা বাঁশ দিয়ে ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে কোনো কাজ হবে বলে মনে হয়না। সরকারীভাবে বড় কোনো বরাদ্দ পেলে হয়তো মসজিদটি রক্ষা করা যেত। গত ৫ বছর পূর্বে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে টিআর প্রকল্পের ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ দিয়ে একটি সিঁড়ি তৈরি করেছিল তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান এবং এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে ১২ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ভুগিলহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি ও ঈদগাহ রক্ষায় সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসি। পাইকপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান কুদ্দুস বলেন, ঈদগাহ ও মসজিদটি রক্ষা করতে বড় ধরনের বরাদ্দ প্রয়োজন।
কিন্তু শুধু মসজিদ নয় ভাটপাড়া বাজারের পুর্বপাশ থেকে শীতের ঘাট পর্যন্ত নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মল্লিক শওকত হোসেন বলেন, আনসার মাস্টারের ২৪ শতাংশ, মৃত মৌলভী সাঈদুর রহমানের ৫০ শতাংশ, মৃত আসাদ কাজীর ৫০ শতাংশ, মৃত তোফাজ শেখের ৪৮ শতাংশ, মৃত আবুল হোসেনের ৪৮ শতাংশ, মৃত কোপেল মাঝির ২ একর, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের ৩৬ শতাংশ, মৃত আহমদ শেখের ১ একর, মৃত বেলাল হোসেনের ১ একর, মৃত কাশেম মাঝিট ৫০ শতাংশ জমিসহ অনেকের জমি ভৈরব নদের গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাটপাড়া বাজার হতে শীতের ঘাট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার নদীরক্ষা বাঁধ নির্মান করা যায় তাহলে সবকিছু রক্ষা করা সম্ভব হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আক্তার বলেন, এটি বড় বাজেটের ব্যাপার, পানিউন্নয়ন বোর্ডই পারে সমস্যার সমাধান করতে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে নদীরক্ষাবাঁধ নির্মানসহ মসজিদটি রক্ষার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।