সুন্দরগঞ্জের তিন গ্রামে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে নদী ভাঙ্গন
মেফতাহুল জান্নাত, জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা : তিস্তায় পানি বৃদ্ধিতে সুন্দরগঞ্জে তিন গ্রামে ভাঙ্গনসুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের তিন গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত পাঁচদিনের ব্যবধানে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। হুমকির মুখে কমিউিনিটি ক্লিনিক ও বাঁধের সড়কসহ বিভিন্ন বসতবাড়ি। ফলে চরম আতঙ্ক আর উৎকন্ঠায় রয়েছেন তারা। ভাঙন আতঙ্কে এলাকাবাসীর নির্ঘুম রাত কাটছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমন প্রত্যাশা ভাঙ্গনের কবলে পড়া মানুষদের।
সরেজমিনে গিয়ে মঙ্গলবার দেখা যায়, নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে নদীর গতিপথ। এতে হরিপুর ইউনিয়নের পাড়াসাধুয়া, মাদারীপাড়া ও চর মাদারীপাড়া কারেন্ট বাজার গ্রামে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে এই তিন গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবারের বসতবাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত মানুষ গবাদী পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন বাঁধ ও স্বজনদের বাড়িতে। নদীতে ডুবে গেছে চর আকনপাড়া জামে মসজিদ ও হফেজিয়া মাদ্রাসা। ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ধান-পাট ক্ষেত ও বিভিন্ন শস্যের বিজতলাসহ আবাদি জমি। হুমকির মুখে আছে চর মাদারীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিক ও বাঁধের সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা।স্থানীয়রা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে তিস্তার এই ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নেবে। তারা বলছেন নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।ভাঙ্গনের কবলে পড়া সাদেকুল ইসলাম জানান, পানি যে পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে এতো ভাঙ্গনের কথা নয়।
নদী তাঁর গতিপথ পরিবর্তন করায় এমনটা হচ্ছে বলে দাবি তার। তিনি আরও বলেন, নদীর পানি হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার এলাকায় ধাক্কা দিতো এরআগে। জিও ব্যাগ ফেলার কারণে আর ওখানে ধাক্কা দেয় না। সেই পানিটা পথ পরিবর্তন করে এসে এখানে ধাক্কা দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।ভাঙ্গনের শিকার এরশাদ আলী বলেন, গত শনিবার তখন সকাল নয়টা বাজে। রান্না করছে তাঁর স্ত্রী। এরই মধ্যে ভাঙ্গন শুরু। গবাদি পশু ও দুটি ঘরসহ মালামাল সরাতে পেরেছি। তারপরেও নিমেষেএকটা ঘর নদীতে চলে যায়। এখন আতœীয়র বাসায় আছি।হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ্যাডঃ নাফিউল ইসলাম জিমি ভাঙ্গনের কবলে পড়া এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে তিস্তায় পানি বেড়েছে। সেই সাথে গতিপথ পরিবর্তন করেছে নদী।
আর এ কারণে নদী পাড়ে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দিতে তালিকা করা হচ্ছে।সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মন্ডল বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ ভাঙ্গনের সংবাদ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ লোকদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের দেয়া হবে।গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, কাশিম বাজার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কারণে নদী তার গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে না। অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বিষয়টি জানি। তবে ভাঙ্গনের খবর জানা নেই। দ্রুত লোক পাঠিয়ে খোঁজ নিচ্ছি ।