বাঘারপাড়ায় মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বরাদ্দের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ

0

যশোর প্রতিনিধি : মৎস্য চাষ ও বিভিন্ন মৎস্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

কিন্তু সে উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন হচ্ছেনা এ উপজেলায়। গত অর্থ বছরে ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষ প্রযুক্তি সেবা প্রকল্পের (দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় আরডি (ফলাফল প্রদর্শক) প্রদর্শনীর টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মৎস্য কর্মকর্তা নিজের ইচ্ছামতো দর নির্ধারণ করে কেনাকাটা করছে।

বেনিফিসায়ারি গ্রুপ (সিবিজি) দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধাভোগী একই পরিবারের ব্যক্তিদের মাঝে মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, গত অর্থ বছরের ৭ এপ্রিল সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর আরডি প্রদর্শনী প্যাকেজে বাঘারপাড়া মৎস্য কর্মকর্তার অনুকুলে প্রশিক্ষণ বাদে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়। সেখানে বিভাজন অনুযায়ি উপজেলার নয় জন মৎস্য চাষীকে কার্প নার্সারি , মিশ্র চাষ, পাবদা, মনোসেক্স, পাঙ্গাস, কৈ মাছের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। ৫ এপ্রিল একই প্রকল্পের বেনিফিসায়ারি গ্রুপ (সিবিজি) একটি গ্রুপের পুকুর স্থাপন প্রদর্শনী কার্যক্রমের জন্য দেওয়া হয় দুই লাখ টাকার বরাদ্ধ। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রদর্শনীর সব কেনাকাটা মৎস্য কর্মকর্তা নিজেই তার ইচ্ছামতো সেরেছেন।

বাঁকড়ি এলাকার তিন ব্যক্তির দরপত্রের কাগজ জোগাড় করে খাতা কলম ঠিক রেখে মাছের দর ও খাদ্য নির্ধারণ করেছেন কর্মকর্তা। জুনের আগেই সব বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় আরডি প্রদর্শনীর অন্তত চার জন চাষীর সাথে। তারা অভিযোগ করেন, প্রদর্শনীর বরাদ্ধের সব টাকা তাদের দেওয়া হয়নি। বেশির ভাগ কেনাকাটা মৎস্য কর্মকর্তা নিজেই করেছেন। গত ১৫ জুন উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে আরডিদের মাঝে মৎস্য উপকরণ বিতরণ করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়।

এসব বরাদ্দ থেকে তাদের প্রত্যেককে ১০-১৫ হাজার টাকা কম দেওয়া হয়েছে। এভাবে মৎস্য কর্মকর্তা প্রকল্পের প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা নিজের পকেট ভারী করেছেন বলে অভিযোগ। এদিকে বেনিফিসায়ারি গ্রুপ (সিবিজি) দেওয়া হয়েছে বিশেষ সুবিধাভোগী একই পরিবারের ব্যক্তিদের মাঝে। এ গ্রুপ নিয়ে এলাকাবাসী হতবাক হয়েছে। স্বামী, স্ত্রী, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচাতো ভাই, ভাগ্নে জামাই মিলে বিশ সদস্য গ্রুপ করা হয়েছে। গ্রুপটি নদীর জায়গা দখল করে পুকুর বানিয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকার সুবিধা ভোগ করছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাসুয়াড়ি ইউনিয়ন খলিলপুর গ্রামে মৃত বাবু খাঁনের তিন ছেলে রুহুল আমিন খাঁন সভাপতি, মোশারেফ হোসেন খাঁন সাধারণ সম্পাদক, আব্দুল খাঁন কোষাধ্যক্ষ। সদস্য রাখা হয়েছে, একই পরিবারের ইসাহাক আলী খাঁন, মৃত গফুর খাঁনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম, আব্দুল খাঁনের স্ত্রী তহমিনা বেগম, মোশারেফ হোসেন খাঁনের স্ত্রী নিহরুন নেছা, সেলিনা খাতুন, শাহানারা খাতুন, রিজাউল খাঁন, জাহিদুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও রিপন হোসেন।

বাকী সদস্যরা মাছ চাষের সাথে যুক্ত নয় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এরপরেও মৎস্য কর্মকর্তা উল্লেখিত ব্যক্তিদের নিজস্ব পুকুরে মৎস্য চাষ করে আসছেন এবং সকলেই সফল মৎস্য চাষি উল্লেখ্য করে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন। কথা হয় বেনিফিসায়ারি গ্রুপ (সিবিজি) সভাপতি রুহুল আমিন খাঁন এর সাথে।

তিনি বলেন, তার ২ একর পুকুরে প্রদর্শনী হিসেবে মাছ চাষের জন্য ২ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাকে চার হাজার পিস নাইলোটিকা মাছের পোনা ও ১০ ব্যাগ খাদ্য দেওয়া হয়েছে। যার বাজার মূল্য ২০ হাজার টাকা হবে। আপনার পরিবারের প্রায় সব সদস্য গ্রুপে কেন রেখেছেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বোঝেন তো! টাকা ছাড়া কিছুই হয়না। মৎস্য কর্মকর্তাকে টাকা দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা না দিলে হয় না কি!

মনোসেক্স তেলাপিয়া প্রদর্শনী আরডি চাষী মালঞ্চি গ্রামের সেকেন্দার আলী জানান, তার নামে ৪৩ শতক পুকুরে প্রদর্শনী হিসেবে তেলাপিয়া মাছ চাষের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার পিচ মাছের পোনা পেয়েছি, যার বাজার মূল্য ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা।

এর সাথে উপজেলা থেকে প্রথমে ৫ বস্তা ও বাঁকড়ি থেকে ৫ বস্তাসহ ১০ বস্তা মাছের খাবার পেয়েছি। মহিরন গ্রামের নিতাই বিশ্বাসের ৩৩ শতক পুকুরে পাবদা প্রদর্শনী চাষে ৫০ হাজার টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি পেয়েছেন মাছের পোনা কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা ও নয় বস্তা খাদ্য। সব মিলিয়ে তাকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার টাকার উপকরণ। বাকি টাকা কি হয়েছে তিনি জানেন না।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ বালা বলেন, ‘প্রদর্শনী দেওয়া চাষীদেরকে টাকা কম দেওয়া হয়নি। একই পরিবারকে নিয়ে সিবিজি গ্রুপ ও নদীর জায়গা দখল করে পুকুর বানিয়ে সুবিধা নেওয়ার বিষয় আমার জানা ছিল না। কারোর কাছ কোনো প্রকার অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হয়নি।’ জানতে চাইলে যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিচুর রহমান বলেন, ‘আমি এবিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। অনিয়ম পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.