টাকার জন্যই সিএনজি চালক ইমনকে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই : গ্রেপ্তার ৫

0

চাটমোহর প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার দরাপপুর ব্রিজের কাছে অটো সিএনজি ছিনতাই করে চালক ইমনকে (১৭) হত্যার পর লাশ ফেলে দেয় ছিনতাইকারীরা। পুলিশ লাশ উদ্ধারের ১৮ ঘন্টার মধ্যে ৫ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে; চাটমোহর মির্জাপুর এলাকার শামসুল মন্ডলের ছেলে নুরুজ্জামান মন্ডল (৩৪), রবিউল এর ছেলে হৃদয় (১৯), রোস্তম আলীর ছেলে সেলিম ওরফে জেলিম (১৯), রুহুল আমিনের ছেলে হুমায়ুন কবির টুটুল (১৬) ও রওশন মিস্ত্রির ছেলে রাকিবুল (১৯)। চাটমোহর থানার সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

পুলিশ জানায়, চাটমোহরের এসএসসি পরীক্ষার্থী সিএনজি চালক জাকির হোসেনের ছেলে ইমন হোসেন (১৭) পরীক্ষার জন্য ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিলেও করোনা ও লকডাউনের কারনে পরিবারকে সহযোগিতার জন্য বাবার সাথেই পালা করে সিএনজি চালাতে শুরু করে ইমন। ১৮ আগস্ট রাতে পিতাপুত্র বাড়ি ফিরছিল। এ সময় সিএনজি চালাচ্ছিল ছেলে ইমন। বাবা বসে ছিল যাত্রীর আসনে। ইমন তার বাবাকে মাঝগ্রাম বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে রিজার্ভ ভাড়া মারার জন্য ঢাকা থেকে আগত প্রতিবেশি মন্টুর মেয়েকে আনতে মান্নাননগরে অবস্থান করে। রাস্তায় অনেক যানজট থাকায় মন্টুর মেয়ের আসতে দেরি হবে জেনে ইমন অতিরিক্ত ভাড়া মারার জন্য মন্টুর সাথে পরামর্শ করে নেয়। এ সময় পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী চার যুবক রাকিব, নুরুজ্জামান, হৃদয় ও টুটুল মান্নাননগরে এসে ইমনের সিএনজি ভাড়া করে।

পুলিশ গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে জানায়, ৩০০ টাকা মিটিয়ে ছিনতাইকারীরা ইমনকে ভাড়া করে বওসা ঘাটের উদ্দেশ্যে মান্নাননগর থেকে রওনা দেয়। ঘটনার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে পরিকল্পনানুযায়ী দরাপপুর ব্রিজের কাছে এসে মোবাইল ফোন পড়ে গেছে এমন অজুহাত দিয়ে ছিনতাইকারীরা গাড়ী থামিয়ে নামে। কৌশলে তারা ইমনকে পেছন থেকে ধরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হাত-পা বেঁধে এবং মুখ চেপে ধরে হত্যা করে। পরে লাশটি কাঁশবনের কাছে লুকিয়ে রাখে। ছিনতাইকারীদের মধ্যে নুরুজ্জামান আগে থেকে যোগাযোগ করা চোরাই মালামাল বিক্রির হোতা নাঈমের সাথে কথাবার্তা বলে ছিনতাই করা অটোসিএনজিটি নিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পৌঁছে দেয়। বাকিরা আরেকটি অটোসিএনজি রিজার্ভ করে চাটমোহর চলে আসে।

সংবাদ সম্মেলনের জানানো হয়, গত ২০ আগস্ট ইমনের মরদেহ ঘটনাস্থলের বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিহতের পরিবার থেকে অজ্ঞাত ৪ যাত্রীর নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পর থেকেই পুলিশ ঘটনা উদঘাটনে মাঠে নামে। বিভিন্ন সোর্স ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাত ১০ টার দিকে রাকিবকে সনাক্ত করে পুলিশ। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ নুরুজ্জামান, হৃদয় ও টুটুলকে আটক করে। আটককৃতদের কাছ থেকে পুলিশ সিএনজি ছিনতাইয়ের সত্যতা পায়। পরে সিএনজি উদ্ধারে পুলিশ উল্লাপাড়ায় নাইমের বাসায় অভিযান চালায়। তাকে আটক করতে না পারলেও সিএনজিটি জব্দ হয়। আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরে বিশেষ অভিযান চালিয়ে মামলার আরেক আসামী রাকিবুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

সিএনজি চালক ইমন হত্যাকান্ডের ক্লু উদঘাটন ও ছিনতাই হওয়া অটোসিএনজি উদ্ধারে আভিযানিক চৌকস দলকে সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান। এই টিমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সিন্ধা আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম, চাটমোহর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সজীব শাহরীন, চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান বাসির, তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সুব্রত কুমার ঘোষ ও সুব্রত কুমার দাস।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.