উপকারে আসছেনা ভবদহ স্লুইচ গেটের পানি নিস্কাশন কার্যক্রম
যশোর প্রতিনিধি : প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে ভবদহ স্লইচ গেট দিয়ে সেচপাম্পে পানি নিস্কাশন কার্যক্রম চালিয়েও এলাকার মানুষের তেমন উপকারে আসছে না বলে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ। বিলে পানি না থাকায় গেল বছরের তুলনায় এবার বোরো মৌসুমে ধানের আবাদ আরও কমে যাবে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের। এখনো কমপক্ষে ২০ গ্রামের লাখো মানুষ পানি বন্দী রয়েছে।
যে কারণে ব্যয়বহুল এ সেচ প্রকল্পের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এখন তারওপর স্লুইচ গেটের তলা দিয়ে লিকেজ (পানি টেকা নদীতে ফিরে আসা) হওয়ায় শুধুই পাম্পে পানি নিস্কাশন হচ্ছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বিষয়টি বিএডিসি কর্মকর্তারা একাধিকবার পাউবো’র কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি বিএডিসি’র চেয়ারম্যান, কৃষি সচিব, খুলনা বিভাগীয় প্রধান (সেচ বিভাগ)সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ভবদহ এলাকায় পরিদর্শন করেন এবং লিকেজের বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে যশোর সার্কিট হাউজে কৃষি মন্ত্রীর উপস্থিতিতে এক সভায় পাউবোকে লিকেজের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট পাউবো সূত্রে জানা যায়, ভবদহ তৎসংলগ্ন বিলে ফসল ফলাতে ও পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবো (পানি উন্নয়ন বোর্ড) ও বিএডিসি (বাংলাদেশ কষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) যৌথ উদ্যোগে চলতি বছরের শুরুতেই এ কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএডিসির খুলনা বিভাগীয় প্রধান (সেচ বিভাগ) আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এ অঞ্চলের বিলে ফসল ফলাতে ও মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পাউবো’কে বিএডিসি ৩০ এইচপি (হর্সপাওয়ার) পাওয়ারের ২০টি পাম্প সরবরাহ করে। যা রক্ষণাবেক্ষনে বিএডিসির ৮ জন লেবারসহ একজন উপ-প্রকৌশলী সেখানে সার্বক্ষনিক দেখভাল করে থাকেন।
কিন্তু লিকেজ দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তা পাউবো’কে অবহিত করা হলেও কোন পদক্ষেপ নেয়নি। গত ১১ সেপ্টেম্বর বিএডিসি’র চেয়ারম্যান ডঃ অমিতাভ সরকার, কৃষি সচিব মোঃ মেজবাহুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শনে আসলে লিকেজের বিষয়টি তাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়। গত ১২ সেপ্টেম্বর যশোর সার্কিট হাউজে কৃষি মন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাকের উপস্থিতিতে এক সভায় পাউবোর’ নির্বাহী প্রকৌশলীকে লিকেজের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
যপবিস-২-এর ডিজিএম (কারিগরি) আবু হেনা শফিক কামাল জানান, পাউবো’র আবেদনের প্রেক্ষিতে সেচপাম্প কার্যক্রম চালাতে গত ৪ জানুয়ারি ২০টি সংযোগ দেওয়া হয়। পাম্প চালাতে ৭০০ কেভিএ ট্রান্সফরমার বসাতে কন্সট্রাকশন ব্যয় হয় ৭ লাখ ৬০ হাজার এবং ট্রান্সফরমারের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা। পুরো ব্যয় সমিতির পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
এছাড়া পাউবো প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে প্রায় ১৪ লাখ টাকা। বিএডিসির ৮ লেবারের জন্য প্রতিদিন ৪ হাজার টাকা ব্যয়সহ সেচ পাম্পে নির্বিঘ্নে পানি সরবরাহে পউবোর’ আওতায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে টেকা নদী খনন করা হচ্ছে। কিন্তু এত কর্মযজ্ঞের পরও এ সেচ কার্যক্রম এ অঞ্চলের মানুষের উপকারে আসেনি। গেল বারের চেয়ে এবার বোরো মৌসুমে ভবদহ সংলগ্ন বিলগুলোতে ধানের আবাদ কমবে। মনিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান জানান, গত বোরো মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২৯ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়। ভবদহ সংলগ্ন ৫টি বিলের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে এবার বোরো ধানের আবাদ কমে যাবে।
ভবদহ পানি সংগ্রাম কমিটির নেতা কমরেড আব্দুল হামিদ বলেন, সম্প্রতি ভবদহ সংলগ্ন ৩০ গ্রামের মানুষের সাথে এক সভায় উপস্থিত একজনও বলেনি সেচ পাম্পে পানি নিস্কাশনে উপকৃত হয়েছেন।
বাজে কুলটিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক পরমানন্দ মন্ডল বলেন, বাজেকুলটিয়া, হাটগাছা, ডহর মশিয়াহাটি, সুন্দলী, আন্দা, ডুমুরতলা, বেবভিটাসহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্ধী রয়েছেন। তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ পাউবো কর্তৃপক্ষ। পাউবো’র জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, লিকেজ একটু হচ্ছে কিন্তু তা বন্ধে নানা রকম উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।