দিনাজপুরের আব্দুলপুর গ্রাম এখন পুতুল গ্রাম হিসেবে পরিচিত
মোঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব, দিনাজপুর প্রতিনিধি : দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর বানিয়াপাড়া গ্রামে ৫ শতাধিক নারী সংসারের কাজের ফাঁকে নিপুণ হাতে সুতা-কাপড় দিয়ে খেলনা তৈরি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নারীরা পুতুল তৈরি করে একদিকে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন, অন্যদিকে সহায়তা করছেন পরিবারকে। শুধু বাড়ীর গৃহবধূরাই নয়, পুতুল তৈরি করে আয় করছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও।
উপজেলার আব্দুলপুর বানিয়াপাড়া গ্রামটি বাইরে থেকে দেখে মনে হবে বাংলাদেশের অন্য সাধারণ গ্রামগুলোর মতো, কিন্তু গ্রামের ভেতরে দৃশ্য অন্যান্য গ্রামগুলোর থেকে একদমই আলাদা। সেখানে দেখা যায় নারীরা দলবদ্ধ হয়ে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিপুণ হাতে সুতা-কাপড় দিয়ে তৈরি করছেন খেলনা পুতুল।কিন্তু অন্যান্য গ্রামগুলোতে দেখা যায় সারাদিনের কাজের ফাঁকে গ্রামের নারীরা সাধারণত ভাতঘুম কিংবা কাঁথা সেলাই করে সময় কাটান।
তাদের তৈরি এই সুতার পুতুলের চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে এখন দেশের বাইরেও বেড়েছে। ফলে গ্রামের নামই এখন “পুতুল গ্রামে” পরিণত হয়েছে। জানা যায় যে, দুই বছর আগে একটি বেসরকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গৃহবধূ মনিকা রানী দাস পুতুল তৈরি করা শেখেন। তারপর সুতা এনে পুতুল তৈরি করার কাজ শুরু করেন তিনি। তাকে দেখে গ্রামের অন্যান্য নারীরাও পুতুল তৈরিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বর্তমানে দুইজন সুপারভাইজারের আওতায় গ্রামের প্রায় ৫০০ নারী কারিগর পুতুল তৈরি করে অতিরিক্ত টাকা আয় করছেন। যা দিয়ে তারা পরিবারের আর্থিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছেন।পুতুল তৈরির কাজে কারিগরদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।
এক গৃহবধূ বলেন, “দুবছর আগে আমার প্রতিবেশী মনিকার কাছ থেকে সুতার পুতুল বানানো শিখি। পুতুল বানানোর টাকা দিয়ে সংসারের বিভিন্ন উন্নতিসহ সন্তানদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারি।” এবি ক্রুসেড-এর স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এসব পুতুল আমেরিকা, ইংল্যান্ড,জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
এবি ক্রুসেডের সুপারভাইজার ললিতা রানী রায় বলেন, “এবি ক্রুসেড আমাদের সুতা, তুলা ও পুতুল তৈরির সব সরঞ্জাম দিয়ে দেয়। একই সঙ্গে পুতুলের নমুনাও দিয়ে দেয় তারা। নমুনা দেখে গ্রামের গৃহবধূরা পুতুলগুলো তৈরি করে দেয়।”
তারা আরো জানান, আকৃতিভেদে প্রতিটি পুতুলের দাম ১৫ থেকে ৬৫ টাকা হয়। দিনাজপুর মহিলা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুর্শেদ খান বলেন, দিনাজপুর বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চলের নারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কারিগর তৈরি করা হচ্ছে । সেই ধারাবাহিকতায় চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের নারীরা হাতের নিপুন ঘাথুনির মাধ্যমে সুতার পুতুল তৈরি করে নিজেরদের আর্থিক ভাবে স্বাবলম্ভি হচ্ছে ।