দ্রুত এগোচ্ছে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আনোয়ারার উপকূল সুরক্ষা । সাগর-নদী ও খালবেষ্টিত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ উপক‚ল প্লাবিত হয়ে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। ভাঙ্গন প্রতিরোধে অরক্ষিত আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় ৪২টি প্যাকেজে ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কয়েক ধাপে প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭৭ কোটি টাকায়। বর্তমানে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। নির্ধারিত মেয়াদ ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানাচ্ছেন বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর তাণ্ডবে উপক‚লের ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে বিলীন ও ১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বারবার ভাঙ্গনের শিকার আনোয়ারার উপক‚লীয় এলাকা পেতে যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রূপ। একদা যেখানে ছিল আতঙ্ক, তা এখন পরিণত হচ্ছে বেড়াবার জায়গায়। মানুষ এখন সেখানে ছুটে যায় সেলফি ছবি তুলতে এবং ক্যামেরায় সৌন্দর্যের দৃশ্য ধারণে।
প্রকল্পে যা আছে ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ, নদীর তীর ও সমুদ্র ডাইক সংরক্ষণ, পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, খাল পুনর্খনন, ভূমি অধিগ্রহণ ও বনায়নের জন্য কয়েক ধাপে ৫৭৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের অনুমোদন পায় একনেকে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পে নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও পুরাতন বাঁধ সংস্কার করা হবে ৬৪ দশমিক ৭৫৯ কিলোমিটার। বেড়িবাঁধের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। নদীর তীর রক্ষা ও সমুদ্র ডাইক সংরক্ষণ করা হবে ১১ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার। এরমধ্যে পারকি থেকে বার আউলিয়া পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার, শিকলবাহায় ১ কিলোমিটার ও সাঙ্গু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ৫ কিলোমিটারে সিসি বøক বসানো হবে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮২ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৪০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
প্রকল্পে রয়েছে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো স্লুইস গেট ৩৫টি। এরমধ্যে ২৩টি পুরাতন স্লুইস গেট সংস্কার এবং ১২টি নতুন করে নির্মাণ। নতুন করে আরও ৫টি স্লুইস গেট নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাঙ্গু নদীর কিছু অংশ ও খাল পুনর্খনন হবে ১৭ দশমিক ০৯ কিলোমিটার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি টাকা। কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। বিভিন্ন এলাকায় নতুনভাবে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৫ হেক্টর। ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে ১৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাঁধের দুইপাশে গাছ রোপণ করা হবে ৩৩ হাজার ৫০০টি। ব্যয় ধরা হয়েছে ডিপিপি এক কোটি টাকা। সবগুলো প্রকল্পসমূহের কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের জুন মাসে।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত আনোয়ারা উপক‚লীয় এলাকার বাসিন্দারা নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জানান, উপক‚লীয় এলাকা সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৭৭ কোটি টাকার বরাদ্দ দিলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপক‚লীয় এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে উপকূলের প্রায় ১০ হাজার মানুষ জীবন হারায়। সেই থেকে আনোয়ারাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল একটি টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। কিন্তু এক মৌসুম না যেতেই বিভিন্ন এলাকায় বিলীন হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ।
ফলে উপকূলবাসীকে রক্ষায় সরকারী বৃহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। আনোয়ারা উপকূল সুরক্ষায় ৫৭৭ কোটির টাকার মেগাপ্রকল্প থেকে আনোয়ারাবাসী কী কী সুফল পাবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তনয় কুমার ত্রিপুরা বলেন, আনোয়ারাবাসী ইতোমধ্যে প্রকল্পের সুফল পাওয়া শুরু করেছে। ১৯৯১ সালের সাইক্লোনের পর থেকে উপকূলের এমন কোন এলাকা নেই যেটাতে লবণের পানি প্রবেশ করেনি।
এইবারই প্রথম এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন অবস্থায় কোন এলাকায় পানি প্রবেশ করেনি। ফলে উপক‚লীয় এলাকার লোকজনের জনজীবন স্বস্তিতে নেমেছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে উপক‚লীয় এলাকা হিসেবে সাগরে সাইক্লোনের সতর্ক সঙ্কেত দেখা দিলে এলাকার লোকজন বিশেষ করে রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়ার লোকজন আগে ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সাইক্লোন সেন্টারে চলে যেত। এইবারের দৃশ্য হচ্ছে উল্টো। সাগরে সাইক্লোনের বড় বড় ঢেউ দেখার জন্য লোকজন বেড়িবাঁধের দিকে ছুটে গেছে। পরিবর্তনটা এই জায়গায় এসেছে। একটা সময় মানুষ ভয়ে সাইক্লোন সেন্টারে যেত। আর এখন সেলফি তোলার জন্য ছুটে যাচ্ছে
বিভিন্ন এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ, স্লুইস গেট ও সিসি ব্লক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তনয় কুমার ত্রিপুরা বলেন, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। এখনও কাজ সার্ভে করে বুঝে নেয়া হয়নি। টাস্কফোর্সের লোকজন আগে সার্ভে করেছে, কাজের পরও সার্ভে করবে। কোথাও কাজ কম-বেশি করলে সার্ভেতে ধরা পড়বে। তখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের শতভাগ বিল পাবে না । যে স্থানে এক ফুট মাটি কম পড়বে সে স্থানের টাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, পারকি সমুদ্র সৈকত থেকে সাঙ্গুর মোহনা গহিরা বার আউলিয়া পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার সিসি ব্লকসহ বেড়িবাঁধের কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে মার্চের দিকে দৃশ্যমান কাজ দেখা যাবে। এই ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ওপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এইচবিবি সড়ক করে দেয়া হবে।