১১ বছরের ফয়সাল সাইকেল মেরামত করে পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ বহন করে
সাইফুর নিশাদ, নরসিংদী প্রতিনিধি : পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী ফয়সাল। সাইকেল মেরামতির কাজও করে সে। সেই আয়ে সংসার চলে এবং পড়াশোনার খরচ জোগাড় হয় তার। স্কুলের আগে ও পরে দোকানে কাজ করে এ ভাবে জীবনের রসদ জুগিয়ে চলেছে সে কচি হাতটি তার রক্তাক্ত জখম করে।
নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের হাফিজুরের পুত্র ফয়সাল।১১৭ নং কৃষ্ণপুর দক্ষিন মধ্যপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ বছর পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে সে। পিতার আয় রোজগার নেই। প্রায়ই বাড়ী থেকে লাপাত্তা থাকেন তিনি।বড় ভাই একটি, সেও কাজ করে। তবে তার আয় নাকি তারই লাগে।ফলে মা সেলিনা ও ছেলে ফয়সালের দুর্দশার অন্ত নেই।তার মা সেলিনা জানান, গেলো করোনায় বাপ কৃষ্ণপুর খালপাড় বাজারে সাইকেল,রিক্সা মেরামতি কাজের দোকান চালাতেন।
স্কুল বন্ধ থাকায় বাপের দোকানে সঙ্গী হয়ে এ মেরামতির কাজ রপ্ত করে ফয়সাল।ফলে বাপ আয় রোজগার বিমুখ হলে সে হাল ধরে সংসারের। সাংসারিক প্রয়োজন ও পড়াশোনার যুগপৎ ব্যয় নির্বাহ করতে তড়িৎ কাজে নেমে পড়ে সে। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর কোমল হাতটিকেই সাইকেল মেরামতির কাজে লাগায় কৃষ্ণপুর খালপাড় বাজারের দোকানে। ফয়সাল জানায়, রোজ সকাল ৭টায় বাজারের দোকানে এসে লোকজনের নষ্ট সাইকেল,রিক্সা মেরামতির কাজে লাগে সে। চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত । তারপরই গোসল সেরে নাকে মুখে দুটো গুঁজে ছুটে ইস্কুলে। বিকেল সাড়ে ৪টায় বাড়ী ফিরে আবার দোকান এবং সাইকেল মেরামতির কর্মে লেগে পড়া তার।
এটিকেই নিয়মিত রুটিন করে নিয়েছে এক ক্ষুদে জীবন যোদ্ধা ফয়সাল। সে জানায়,এভাবে প্রতিদিন দুশ’/আড়াইশ’ টাকা রোজগার হয় তার। এ টাকায় চলে ৪জনের সংসার। সেই সাথে লেখাপড়ার এটা সেটার জোগান হয় তার।এভাবেই এক প্রাথমিক শিক্ষার্থীর কচি হাত দুটো রক্তাক্ত ক্ষত বিক্ষত হয়ে জীবনের রসদ জুটছে ফয়সালদের পরিবার। ফয়সালের মায়ের কাছে ফয়সালের ভবিষ্যৎ লক্ষ জানতে চাইলে তিনি জানায় ফয়সাল বড় হয়ে একজন সৎ,আদর্শ ও নীতিবান বিচারক হতে চায়।তখন ফয়সালও একটা মৃদু হাসি দিয়ে সম্মতি প্রকাশ করে।