কোভিডত্তোর সফল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস পালন
সাইফুর রহমান : অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এর আয়োজনে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউকেএইড এর সহায়তায় ঢাকা জেলায় ধামরাই উপজেলার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ ৩ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে ৩০তম আন্তর্জাতিক ও ২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে র্যালি ও আলোচনা সভার মাধ্যমে পালন করে।
কোভিডত্তোর বিশের টেকসই উন্নয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজক সংস্থার ধামরাইস্থ কার্যালয়ের চত্বরে স্বাস্থ্য বিধি মান্য করে আয়োজিত আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় প্রকল্প সমন্বয়কারী এস, এম, সাইফুর রহমান বলেন, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এমজেএফ এবং ইউকে-এইড এর সহায়তায় ‘‘ইনক্লুশন অব পারসনস উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ থ্রু কমিউনিটি বেইজড ইনিসিয়েটিভ (আইপিডি-সিআই) প্রকল্পের মাধ্যমে ধামরাই উপজেলায় ২০০০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে বিগত ৩ বছর যাবত প্রকল্প পরিচালিত করছে। কোভিড-১৯ থেকে রক্ষার জন্য প্রকল্পের সেবা গ্রহণকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের টিকা গ্রহণ ও সুরক্ষার পদ্ধতি বিষয়ে মাইকিং, আলোচনা সভা ও মুঠো ফোনে সচেতন করা হচ্ছে এবং সুরক্ষা সামগ্রী হিসেবে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজর বিতরণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ৫৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে খাদ্য ক্রয়ের জন্য ৭৫০০ টাকা এবং পুঁজি হারানো ৩৫০ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে পুনরায় ব্যবসা চালু করার জন্য জন প্রতি ৭০০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ব্যবসায়ে সফল হয়েছেন, তাদের মধ্যে কিছু সফল ব্যবসায়ীদের নিয়ে আজ এ আয়োজন।
সভায় সফল ব্যবসায়ী ও হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এরশাদ হোসেন বলেন, আমার উপার্জন দ্বারা পরিবার মোটামুটিভাবে চলছিল কিন্তু কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ক্রমাগত লকডাউনের কারণে আমার ব্যবসা দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এই অবস্থায় অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আমাকে পুনরায় দোকান প্রতিষ্ঠার জন্য ৭৫০০ টাকা প্রদান করে। আমি বতর্মানে মাসে ১২০০০-১৫০০০ টাকা আয় করি। এখন আমি আমার পারিবারিক জীবন নির্বিঘ্নে পরিচালনা করছি। শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী জনি আক্তার বলেন, কোভিড -১৯ সময়কালে রিকসা চালক আমার স্বামীর আয় বন্ধ হয়ে যায় এবং সংসার চালাতে আমরা বিপদে পরে যাই। তখন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আমাকে ৭৫০০ টাকা প্রদান করে এবং আমি একটি শেলাই মেশিন ক্রয় করে আস্তে আস্তে উপার্জন শুরু করি। এখন আমার আয় প্রতি মাসে ৫০০০-৬০০ টাকা।
শাহিনুর ইসলাম (বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি) বলেন, আমি পাখি ও গরু পালন করি। কোভিড -১৯ এবং বন্যায় আমার অনেক কোয়েল পাখি মারা যায়। গরু বিক্রির সিদ্ধান্ত নেই। তখন আমাকে সাড়ে সাত হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া আমাকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, পারিবারিক হাঁস-মুরগি এবং গরু-ছাগল পালন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবার আমি ব্যবসা শুরু করি এবং এখন আমি পূর্বের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শুরু করেছি। আব্দুল আলীম (কণা) একজন ট্রান জেন্ডার বলেন, আমার একটি চায়ের দোকান। আমার আয় ভালই ছিল কিন্তু কোভিড -১৯ এর প্রভাবে আমার দোকানটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পূর্ণরায় দোকানটি চালু করার জন্য আমাকে ৭০০০ টাকা দেওয়া হয়। পৌরসভার মেয়র এবং ধামরাই থানার ওসি আমার চায়ের দোকানটি উদ্বোধন করেন। এখন আমার বিক্রি প্রতিদিন প্রায় ২৫০০-৩০০০ টাকা এবং মাসিক লাভ প্রায় ১৪০০০-১৫০০০ টাকা। আলোচনা সভা শেষে আয়োজক সংস্থার কার্যালয় থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের একটি র্যালি বের হয়ে ধামরাই উপজেলা পরিষদে গিয়ে শেষ হয়।