সুজানগরে ইটভাটার তাপে পুড়ল কৃষকের ৫০ বিঘা জমির ধান
নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার সুজানগরে ইট ভাটার আগুনের গ্যাসের তাপে পুড়ে গেছে কৃষকের শতাধিক বিঘা জমির ধান। এ ঘটনায় রবিবার (১৭ এপ্রিল) উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ ইটভাটা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা সহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, উপজেলা হাটখালী গ্রামটি ধান উৎপাদনে প্রসিদ্ধ। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের আয়ের মূল চালিকা শক্তি কৃষির বিভিন্ন ফসল। কিন্তু এলাকাবাসীর বাধা উপেক্ষা করে গ্রামের ফসলি জমির ওপর গড়ে তোলা হয় একতা ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা।
পরবর্তীতে ইটভাটাটির নামকরণ করা হয় নিদি ব্রিকস নামে। ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী কৃষি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বনভূমি, অভয়ারণ্য, জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকায় ও বছরে একের অধিক উৎপাদিত ফসলী কৃষি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা নিষেধ রয়েছে।কিন্তু সে আইন লঙ্ঘন করে প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। ইটভাটা তৈরি করতে হলে ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই এর সনদ,পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসক প্রদত্ত লাইসেন্স, কৃষি অধিদপ্তরের প্রত্যয়নপত্র সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ইটভাটা স্থাপন করতে হয়। কিন্তু ওই ইটভাটা সহ উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটারই লাইসেন্স সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।
কাগজপত্র না থাকলেও ইট পোড়ানো হয় ওই সকল ভাটায় বলেও অভিযোগও করেন কৃষকেরা। হাটখালী গ্রামের কৃষক বকুল শেখ কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেন তিনি। এতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৩৪ হাজার টাকা। কিছুদিনের মধ্যে ধান ঘরে তোলা যেত। এরই মধ্যে নিদি ইটভাটার আগুনের তাপে পুড়ে গেছে তার স্বপ্নের লালিত ফসল। কষ্টে অর্জিত ফসল ঘরে তোলার আগেই পুড়ে চিটা হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের চিন্তায় পড়েছেন তিনি। ধান ঘরে না উঠলে ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা পরিবার পরিজনের খাদ্যের যোগান নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি। একই গ্রামের কৃষক লোকমান শেখ ও মহন উদ্দিন জানান, ফসলি জমির ওপর এই ভাটাটি গড়ে ওঠার শুরু থেকে স্থানীয় কৃষকরা প্রতিবাদ করেও সুফল পাননি। অনেক বাধার পরেও অদৃশ্য কারণে এ ভাটা সহ স্থানীয় কয়েকটি ভাটায় অবৈধভাবে পোড়ানো হয় ইট । এরই মাঝে নিদি ইট ভাটার পাশে তাদেও মত আরো অনেক কৃষকের ফসলি শতাধিক বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। গত বছর তারা বিঘা প্রতি প্রায় ২১ মণ হারে ধান পেয়েছিলেন।
এ বছর উঠতি ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় পরিবারের খাদ্য নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ সময় উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ ইটভাটা বন্ধের জোর দাবি জানান তারা। রবিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা নিকটস্থ কয়েক একর জমির ধান সাদা রঙ ধারণ করেছে এবং পুড়েও গেছে তবে দূর থেকে দেখলে মনে হবে সব পেকে গেছে। শুধু তাই নয় সবজিসহ অন্যান্য ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। উঠতি ফসলের এ অবস্থায় কৃষকেরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এদিকে শেষ সম্বলটুকু দিয়ে ধান আবাদ করা কৃষকেরা এভাবে তীরে এসে তরি ডোবায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এ সময় কৃষক আনিস শেখসহ অনেকে জানান, ইটভাটার ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে আমাদের ফসল পুড়ে গেছে। প্রতি বছর আমরা স্থানীয় কয়েকটি ভাটার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। জনবসতি ও কৃষি জমির উপর গড়ে ওঠায় প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম জানান, খবর পাওয়ার পরপরই রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে, ইটভাটার চুল্লি থেকে বের হওয়া গ্যাসের তাপের কারণে কয়েক একর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ইটভাটা মালিক শাহজাহান হোসেন জানান, ইটভাটার চেম্বার বসে যাওয়ায় গরম গ্যাস বের হয়ে গত শনিবার কিছু ধান ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ দিতে শিগগিরই কৃষকদের সঙ্গে বসা হবে। তবে ভাটার বৈধ কাগজপত্র ও ইট পোড়াতে জেলা প্রশাসনের অনুমতিপত্র রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.রওশন আলী জানান, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেরা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।