আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান তানভীর ইসলামের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও সাংবাদিকদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করানোর অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে আটঘরিয়া উপজেলা চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সাইফুল ইসলাম কামাল সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। এ সময় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহঙ্গীর আলম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা সুলতানা তহুরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি বরাদ্দের ভিজিএফ চাউল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার অনুসারীরা মিথ্যা একটি রিপোর্ট বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়াতে প্রকাশ করান। যেটি সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবী করেন চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম কামাল বলেন, এই মিথ্যা তথ্য রটিয়ে এবং গণমাধ্যমে ছাপিয়ে আমার ব্যক্তিগত ইমেজ নষ্ট করার অপচেষ্টা মাত্র। তিনি বলেন, ১৭১০ জন ভিজিএফ ভোগীদের তালিকা ইউনিয়ন কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যেমে উপজেলা কমিটিতে পাঠানো হয়। এরমধ্যে উপজেলার চেয়ারম্যান ৩৪০ জনের তালিকা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য পৃথক তালিকা প্রেরণ করা হয়।
গত বছরের তুলনায় এবার ২৪৫ টি ভিজিএফ ভোগীদের তালিকা কম হওয়ায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা কমিটিতে পাঠাই। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউএনও এবং ডিসিকে অবিহত করলে আমি তাদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে বিষয়টি অবহিত করি। পরে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ডিডিএলজিকে বিষয়টি দেখভাল করার নির্দেশনা দেন। সবার উপস্থিতিতে ডিডিএলজি উপজেলা চেয়ারম্যানের ৩৪৫ তালিকার ভিজিএফ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। আমি সিদ্ধান্ত মেনে নেই এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের তালিকাভূক্ত ৩৪০ জনের ১০ কেজি করে চাউল (৩.৪) মেট্রিক টন কিনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। চাউল বিতরণে সহকারি কমিশনার ভূমি, এসিল্যান্ড মেজিস্ট্রেট, ৫ টি ট্যাগ অফিসার, পুলিশ সদস্যসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের উপসিন্থতিতে সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিতরণ পরিদর্শন করেন এবং শেষে উপস্থিতিতে অড়াইশ থেকে তিনশ জনের ব্যাক্তি উদ্যোগে নগদ দুইশ থেকে তিনশ টাকা বিতরণ করা হয়।
তিনি আর অভিযোগ করেন, উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়ে বিগত ৩ বছর ইউনিয়ন পরিষদের টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিবি, এবং বিভিন্ন সরকারি বরাদ্ধে হস্তক্ষেপ করেছে। সে বিষয়ে আমি উর্ধ্বতন মহলে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে পুনরায় ফিরে পাই। ইউনিয়ন পরিষদকে অকার্যকরা করার বিভিন্ন অপচেষ্টা করছে। ভিজিএফ ৩৪০ জনের চাউল নেওয়ার পরেরদিন উপজেলা চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের ভূল বুঝিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সে ঢালাওভাবে প্রচার করে। বিভিন্ন গনমাধ্যমে যাদের নামসহ বক্তব্য দিয়ে সংবাদ করানো হয়েছে তারা কিছুই জানেননা। উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় কয়েকবার আমাকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে মারধর করেছে। ত্যাগী আওয়ামী লীগের লোকজনকে প্রাধান্য না দিয়ে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জাহঙ্গীর আলম ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা সুলতানা তহুরা অভিযোগ করেন, উপজেলার সকল কাজ থেকে আমাদের সরিয়ে রাখা হয়েছে। কোন ধরণের প্রকল্পের সাথে আমাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। সকল কাগজপত্রে আমাদের জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। রাজস্বসহ বিভিন্ন খাতের টাকা একক সিদ্ধান্তে নিজের ইচ্ছেমত ব্যয় বা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার বাবা পৌর মেয়রের আধিপত্য, ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক ভাবে আমাদের একের পর এক হয়রানী ও জনগণের সেবা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁদভা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য ফিরোজ কবির সাত্তার, বাদশা ফকির, রিপন মিয়া, আব্দুর রব, নাজিমুল্লাহ, আলী রানা, বাদশা মিয়া, সানোয়ার হোসেন, আমিরুল ইসলাম এবং সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের মালেকা খাতুন, রওশনারা খাতুন ও জাহানারা খাতুনসহ ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি, সেক্রেটারীসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং এলাকার সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান তানভির ইসলাম বলেন, ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যে পেয়েছি। সেগুলো ঢাকতে তিনি মিথ্যা রটানোর আশ্রয় নিয়েছেন মাত্র। তাছাড়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অভিযোগও সম্পূর্ণ অসত্য। তারাও সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন উপজেলা থেকে। যার প্রমাণও সংরক্ষিত রয়েছে।