এ যেন আরেক ছিটমহল কুড়িগ্রামে এক উপজেলার মানুষের বসবাস অন্য উপজেলার ভিতরে

0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ গ্রামের প্রায় সোয়া ৩ হাজার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে বসবাস করছে পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের মানচিত্রের অভ্যন্তরে। এ যেন আরেক ছিটমহল। দীর্ঘ সময় ধরে এসব পরিবার বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হলেও জনপ্রতিনিধিরা তাদের দুর্ভোগ লাঘবে কখনো পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ফলে যুগ যুগ ধরে অন্য উপজেলার সুযোগ সুবিধা নিলেও ভোট দিচ্ছেন আরেক উপজেলায়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারলাম। দুই উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। রোববার সকালে সরজমিন ওই এলাকার মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, বৃটিশ আমলে শিরিষ চন্দ্র ও সতিশ চন্দ্র নামে দুই মহারাজা উলিপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দে জোতদারী চালাতেন। তাদের জোতদারী এলাকার সীমানায় বসবাসকারীদের সেইমত তাদেরকে খাজনা দিতে হতো। ভারত ভাগ ও দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও জোতদারদের রেখে যাওয়া সীমানা জটিলতার কারণে ভোগান্তিতে পরে যান এই এলাকার ৫ গ্রামের মানুষ। ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরবর্তীতে নাগেশ্বরী উপজেলার মধ্যে পরে যায়। অপরদিকে ভিতরবন্দ ইউনিয়নের অভ্যন্তরে বসবাসরত ৫ গ্রামের মানুষ উলিপুরের মহারাজার অধীনে থাকায় তারা পরবর্তীতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ভোটার হয়ে যান। সৃষ্টি হয় ছিটমহলগুলোর মত তাদের অবস্থা। ওই এলাকার কৈকুড়ি গ্রামের মৃত: কচের খানের পূত্র আহম্মেদ হোসেন (৮৫) জানান, আমরা সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ৫গ্রামের মানুষ বসবাস করছি পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের ভিতরে। এখানে ৫টি গ্রামের মধ্যে কৈকুড়ি গ্রামে ২২৫টি খানা, বড়ভিটা গ্রামে ১৫০টি খানা, মরাদিগদারী গ্রামে ৭০খানা, টেংনার ভিটা গ্রামে ১০০খানা এবং দিগদারী গ্রামে ৫৫খানাসহ মোট ৬শতাধিক খানায় প্রায় সোয়া ৩ হাজার মানুষ বৃটিশ আমল থেকে আরেক উপজেলার ইউনিয়নে বসবাস করছি। ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৮শ’। বন্যা হলেই আমাদেরকে ভিতরবন্দে আশ্রয় নিতে হয়। সাহায্য সহযোগিতা তারাই করেন। কিন্তু আমরা বাসিন্দা আরেক ইউনিয়নের। এসব এলাকার মানুষের লেখাপাড়া, বিয়ে-শাদী, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিচার-সালিশ, বন্যায় আশ্রয় গ্রহন সবকিছুই করতে হয় ভিতরবন্দে। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদের ইউনিয়ন ভোগডাঙ্গা। ফলে সামাজিক বেষ্টনির সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বেশিরভাগ মানুষ। মাঝখানে বিলের ছড়া দিয়ে বিচ্ছিন্ন এ এলাকার রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে রোগী পরিবহনসহ যাতায়াত সমস্যায় ভুগতে হচ্ছে তাদেরকে। দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত এসব গ্রামের মানুষ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিবর্তন করে বর্তমান অবস্থান নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দের বাসিন্দা হতে চান। এই গ্রামের কাশেম , ছামসুল ও ছামিনা বেগম জানান, চারদিকে ভিতরবন্দ আর আমরা তার ভিতরে বসবাস করছি। এখান থেকে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে যেতে হলে ভিতরবন্দ পার হয়ে আমাদেরকে যেতে হয়। আমাদের অবস্থা ছিটমহলের মানুষের মত। আমরা যেহেতু ভিতরবন্দের ভিতরে আছি, এখন আমরা এখানেই থাকতে চাই। এজন্য আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেন। এ ব্যাপারে ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুর ইসলাম জানান, আপনাদের কে কী বলেছে জানিনা। তবে ওই এলাকার অনেক জ্ঞানী গুণি মানুষ আছে যারা আমার ইউনিয়নে থাকতে চায়। এখনো অনেকে মোবাইল করে আমাকে জানায় ভিতরবন্দ ইউনিয়নে তারা থাকবে না। আমারা ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নে দেশ স্বাধীনের আগে থেকে আছি, এখনো এই ইউনিয়নে থাকতে চাই। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভৌগলিক অবকাঠামো জনগণের কল্যাণ্যের জন্য। এটা একটা স্বাধীন দেশের মধ্যে ছিটমহলের মত অস্থিত্ব। তারা যে উপজেলায় রয়েছে সেখানে এডজাস্ট করে স্থানীয় কতর্ৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ জানান, মানুষগুলো খুবই দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে। জটিলতা কাটাতে স্থানীয় জনগন ও জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.