মেহেরপুরের বেশিরভাগ ইট ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ
মেহেরপুর প্রতিনিধি : জেলার বিভিন্ন ইট ভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ। ফিক্সড চিমনি তাই প্রচলিত আইনের তোয়ক্কা না করেই পরিবেশকে বিপর্যয়ে মুখে ঠেলে দিচ্ছে এসকল ইট ভাটা। জেলা ও জেলার বাইরের বনাঞ্চলের বৃক্ষ ধ্বংস করে লাখ লাখ টন কাঠ পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ভাটাগুলোতে। এসকল ইট ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই শুধুমাত্র ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই চালাচ্ছে ইটভাটা। ইট ভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে উজাড় হচ্ছে মুল্যবান বনজ সম্পদ। অজ্ঞাত কারণেই স্থানীয় প্রশাসন নীরব। অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা অধিকাংশ ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নিয়েছে ৮০ ভাগ ইট ভাটায়। পরিবেশ অধিদপ্তর সেপ্টেম্বর মাসে তাদের ওয়বসাইটে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই চুপচাপ বসে রয়েছে। ইট পোড়ানো শুরু হলেও প্রশাসন বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন নাজরদারী নেই।
ইটভাটা স্থাপন করতে হলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইব্রিড হফম্যান, জিগ-জ্যাগ, ভার্টিক্যাল শ্যাফট কিলন্ অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশবান্ধব ইটভাটা স্থাপন করার বিধান রয়েছে।
সরকারি হিসেবে জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১১৪ টি ইটভাটা রয়েছে। ইট ভাটায় ইট প্রস্তুতের পাশাপাশি অনেক ভাটায় অধিক লাভের আশায় পোড়ানোর কাজও চলছে। যে ভাটাগুলো ইতোমধে ইট পোড়ানোর কাজ করছে তারা কাঠ দিয়েই পোড়াচ্ছেন। অনেকেই ভাটার ভিতরেই স’ মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করে সহজেই জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছেন। যাদের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া, জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছ থেকে কোন প্রকার ছাড়পত্র নেই। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী স্থানীয়দের।
স্থানীয় বিভিন্ন মহল ও পরিবেশে কর্মীদের অভিযোগ, ইটভাটা তৈরি করতে কমপক্ষে ৬ একর জমির প্রয়োজন হয়। ইটের মাটি এলাকার লোকজনের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরের এক থেকে দেড়ফিট মাটি কেটে ইট তৈরির জন্য সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হয়। এতে ফসলী জমির উর্বরতা নষ্ট হয়। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামের ভিতরে পুকুর করে দেওয়ার কথা বলে স্কেবেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর করে দিচ্ছে তবে অনেক সময় পাশের জমির অংশও ভেঙ্গে পড়ে তখন সেই জমির মালিক ও পুকুর করে মাটি দিতে বাধ্য হয়। আবার ট্রাক্টর ট্রলিতে মাটি বহন করে ভাটায় নিয়ে আসার সময় রাস্তায় মাটি পড়ে সাধারণ মানুষ দূর্ভোগের মধ্যে পড়ে। একটু ভারি কুয়াশা বা হাল্কা বৃষ্টিতে পাকা সড়কগুলো মরণ ফাদে পরিনত হয়।
পথচারী ধানখোলা গ্রামের বদরুদ্দোজা তোতা বলেন, ইট ভাটাগুলো রাস্তার পাশেই, ইট পোড়ানো চুল্লীও রাস্তার সাথে লাগানো। রাস্তার পাশেই বালিও মাটির স্তুপ। যানবাহন চলাচলের সময় এই ধূলাবালি চোখে মুখে ঢোকে তাকানো যায় না। অবৈধ ট্রাক্টর টলি দিয়ে ভাটায় মাটি সরবরাহ করা হয়। এসকল ট্রলি দিয়ে মাটি নেওয়ার সময় রাস্তায় মাটি পড়ে কাদা হয়ে চলাচল ঝুকিপূর্ন হয়ে যায়। প্রতিবছরেই অনেক মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হয়।
জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব আলী বলেন, সরকার মুজিববর্ষে যখন বৃক্ষরোপনে গুরুত্ব দিচ্ছে তখন এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল আইনের তোয়াক্কা না করেই গাছপালা কেটে রাস্তার পাশে, গ্রামের মধ্যেও ইটভাটা স্থাপন করছে। ভাটার ধোয়াও ধূলাবালীর কারণে চলাচল করা যায় না। কাঠ পোড়াচ্ছে বিনা বাধাঁয় তাই এলাকার গাছপালা গুলো ধ্বংস হচ্ছো।
গাংনী উপজেলা ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান আতু জানান, এবছর ব্যারেল চিমনী দিয়ে কেউ ভাটা চালাচ্ছে না। কাঠপোড়ানোর কোন অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরে অবেদন করা হয়েছে আমরা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছি। তবে ভাটা অবৈধ না কারন আমরা ভ্যাট ট্যাক্স দেই। ভাটা মালিকরা কাঠ পোড়ান কাঠের সহজ প্রাপ্যতায়।
সামাজিক বনায়ন র্নাসারী ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র মেহেরপুরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাফর উল্লাহ বলেন, আমরা ভাটা মালিকদের কাঠ পোড়াতে নিষেধ করেছি। তবে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টা পরিবেশ অধিদপ্তরের। কিন্তু ভ্রাম্যমান স’ মিল বসিয়ে কাঠ চেরাই করলে অবশ্যই সেটা বাজেয়াপ্ত করবো।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সের চিকিৎসক এমকে রেজা জানান, কাঠ পোড়ানোর ফরে ইটভাটার নির্গত কালো ধোয়ায় মানুষের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারসহ নানা রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত কার্বণ-ডাই অক্সাইডের কারণে মাঠের ফসল ও এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া উপপরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, গত বছর আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলো না তাই আমরা তেমন পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এবার আমাদের নিজস্ব ম্যাহিস্ট্রেট আছে। কোন ভাটাতেই কাঠপোড়াতে দিবো না আমরা খুব শিঘ্রই অভিযান পরিচালনা করবো।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান জানান, ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে কোন প্রকার কাঠ দিয়ে ইট পোড়াতে দিবো না।