দক্ষিণাঞ্চলে শুঁটকি পল্লী গড়ে তুলে বাড়বে কর্মসংস্থান সহ রপ্তানি আয়
ম.ম.রবি ডাকুয়া,বাগেরহাট : বিশ্বে কাঁচা মাছের বিকল্প হিসেবে শুঁটকির ব্যপক চাহিদা ও বাজার গড়ে উঠছে ।যেখানে বাংলাদেশ বড় ধরনের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে ।এ কাজে দেশের সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানীকেও এগিয়ে আসতে হবে।বাংলাদেশের প্রস্তুত কারী শুঁটকির অর্ধেক প্রায় উৎপাদিত হয় দক্ষিণাঞ্চলিয় সাগর চর এলাকায় তাই এখানে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দরে রপ্তানী প্রকৃয়াজাত করন এবং সকল ধরনের প্রসেসিং করা সম্ভব ।যেহেতু স্থানীয় চরে তাজা মাছ ধরে শুঁটকি করার প্রকৃয়া করা হয় এবং এখানকার জেলেরা মাছ ধরে তাই সকল প্রকৃয়া এখানে হলে পরিবহন খরচও কম করা সম্ভব।
দেশের একমাত্র পাইকারী শুটকি বাজার মোকাম চট্রগ্রাম সহ অনেক বিদেশী রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠানও মুখিয়ে তাদের এখানকার জেলেদের দিকে।জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছের মধ্যে রয়েছে লইট্টা,ছুরি,রূপচাঁদা,খলিসা,ভেদা,পোয়া ,দাতনা ,মেদ,কাইন,জাবা,লাক্ষা,ভোলা, ঢ্যলা,নানান প্রজাতির চিংড়ি সহ শতাধিক প্রজাতির মাছ।এসব মাছ রোদে প্রাকৃতিক ভাবে শুকিয়ে বাজার জাত করা হয় ।তবে এ শুকানো প্রকৃয়া কাজে কয়েক ধরনের প্রকৃয়ার লোক জড়িত আছে জেলেরা শুধু মাছ ধরে তার পর একদল কিনে তা শুকায় অন্য একদল শুকনা মাছ কিনে আবর বাজার জাত করে এভাবে প্রায় চার/পাঁচ হাত ঘুরে এ শুটকি রপ্তানী হয়ে থাকে যাতে দেশের ব্যবসায়ী লাভবান সহ বৈদেশীক মুদ্রও অর্জিত হচ্ছে।সাগর এলাকায় প্রায় ১৫ টির অধিক চরাঞ্চল রয়েছে সেগুলো হচ্ছে দুবলা,মেহের আলী,আলোরকোল,অফিস কিল্লা,মাঝির কিল্লা,শেলার চর,নারকেলবাড়িয়া,মানিকখালী,ছোঠ আমবাড়িয়া,বড় আমবাড়িয়া,কবরখালী,কোকিলমনি,চাপড়াখালী।স্থানীয় জেলেদের মতে,দক্ষিণাঅঞ্চলের দেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে এটি একটি আশাজাগানিয়া খবর।
এটা এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট যে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি শুঁটকি রপ্তানি করে আমরা বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। আমাদের দেশ থেকে শুঁটকি রপ্তানি শুরু হয় কয়েক দশক আগে থেকে। তখন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকা কক্সবাজার, টেকনাফ, কুতুবদিয়া, রাঙ্গাদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, চকরিয়া, সেন্ট মার্টিন এলাকায় তৈরি শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করা হতো। তবে প্রথম দিকে স্বল্প পরিমাণে শুঁটকি রপ্তানি করা হতো। এখন বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির পরিমাণ বেড়েছে। কক্সবাজার অঞ্চল ছাড়িয়ে দেশের আরও বহু স্থানে শুঁটকি উৎপাদিত হয়। সেসব স্থান থেকেও বিদেশে শুঁটকি রপ্তানি করা হচ্ছে।এ ক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চলের সাগর চরগুলো ব্যপক ভুমিকা পালন করছে।
তবে এসব শুঁটকি সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে রপ্তানি হয়ে থাকে এবং বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। এমনকি নেই সরকারিভাবে শুঁটকি উৎপাদন মনিটর করা বা শুঁটকি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ।আধুনিক মান সম্মত ভাবে প্রকৃয়াজাত করা হলে এটি আরো বৈদেশীক মুদ্রা আনতে সম্ভব।সবকিছু মিলিয়ে শুঁটকি উৎপাদন ও রপ্তানি করতে গিয়ে রপ্তানিকারকেরা নানা দুর্ভোগে পড়েন। ফলে বিদেশের বাজারে যে পরিমাণ শুঁটকির চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ শুঁটকি রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশের সচেতন মহল ও অর্থনীতি বিদরা মনে করেন এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ নজর ও নীতিসহায়তা জরুরি। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই শিল্প থেকে যে আরও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, তা সরকারকে বুঝতে হবে। তাই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, স্থায়ী শুঁটকিপল্লি নির্মাণসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
দেশের দক্ষিণ সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় লোকদের অন্যতম পেশা হচ্ছে সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুঁটকি উত্পন্ন করা। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার প্রায় দশ লাখ লোক শুঁটকি উত্পাদন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সারা বছর সমুদ্র থেকে মাছ ধরা হলেও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় বছরের নির্দিষ্ট সময়ে। শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় হলো অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত। এই সময়ে আমাদের দেশের সমুদ্র সীমানা থেকে হাজার হাজার টন মাছ ধরা হলেও সব মাছ দিয়ে শুঁটকি করা হয় না। কিছু কাঁচা মাছ বাজারে বিক্রি করা হয়। অবিক্রীত অথবা নির্ধারিত পরিমাণের মাছ দিয়ে শুঁটকি করা হয়ে থাকে। এসব সামুদ্রিক মাছকে প্রাকৃতিক এবং বৈজ্ঞানিক উপায়ে অর্থাত্ রৌদ্রে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বৈদ্যুতিক তাপেও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
তবে খেয়াল করে দেখা গেছে প্রাকৃতিকভাবে উত্পাদিত শুঁটকির মান বৈজ্ঞানিক উপায়ে উৎপাদিত শুঁটকির তুলনায় নিম্নমানের। বৈজ্ঞানিক উপায়ে উত্পাদিত শুঁটকির গুণগতমান অনেক উন্নত এবং স্বাস্থ্যসম্মত হয়ে থাকে। সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির মধ্যে ছুরি, লইট্যা, রূপচাঁন্দা, টেকচাঁন্দা, কোরাল, লাক্ষ্যা, সুরমা, পোপা, মাটিয়া, চিংড়ি, ফাইস্যা, ফাতরা, রিস্যা, হাঙর, রিঠা, বাচা, রূপালী ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি। অপর দিকে মিঠা পানির শুঁটকির মধ্যে রয়েছে টেংরা, শোল পুঁটি ইত্যাদি। ভোজন রসিকদের অতিপ্রিয় এবং সুস্বাদু এসব শুঁটকি অতি উচ্চমূল্যে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। খুচরা বাজারে ছুড়ি শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা, লইট্যা প্রতি কেজি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, রূপচান্দা ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা, কোরাল ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা, লাক্ষ্যা শুঁটকি ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, চিংড়ি শুঁটকি বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। শুঁটকি এখন মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। শুঁটকি এখন শুধু সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে না, দেশের পোলট্রি এবং মৎস্য খামারে শুঁটকি ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জাতের অপ্রচলিত শুঁটকি বিদেশে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে এসব শুঁটকি বিদেশে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। বিদেশে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে সরকারি তরফ থেকে শুঁটকি রপ্তানিকারকরা কোন প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পান না। ব্যাপকভিত্তিতে শুঁটকি রপ্তানির ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সাথে সাথে দেশের শুঁটকি শিল্পে বিশালসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব।