ঈশ্বরদীতে নিলাম ছাড়াই বাগান বিক্রি, টাকা গেল অধ্যক্ষের পকেটে
রিমন হোসেন, ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি: পাবনার ঈশ্বরদীতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই মিরকামারী আদর্শ আলিম মাদ্রাসার লাখ টাকার লিচু বাগান নামমাত্র মুল্যে গোপনে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। তবে লিচু গাছ বিক্রির ব্যাপারে কিছুই জানেন না মাদ্রাসা কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যরা। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে বাগানটি বিক্রি করে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা
জানা গেছে, মাদ্রাসাটি আলীম পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে মাদ্রাসাটির উন্নয়ন হয়েছে শতভাগ। লিচু গাছগুলোতে এ বছর দুই লক্ষ টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা ছিল। লিচু বিক্রির সকল অর্থ ব্যায় হয় মাদ্রাসার শিক্ষার মান উন্নয়নে। তবে এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার ছয়টি লিচু গাছের সমন্বয়ে বাগানটি বিক্রি করতে হলে মাদ্রাসা কমিটির সকলকে অবগত করে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রির নিয়ম থাকলেও তা অমান্য করেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ সালামের সহযোগিতায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও দাতা সদস্য মোঃ জয়নালের যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রী হত্যাচেষ্টার মামলার আসামী জাকারিয়া পিন্টুর সহোদর বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামের কাছে ১৫ হাজার টাকা দরে বাগানটি গোপনে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতায় অবৈধভাবে একজন বিএনপি নেতার কাছে মাদ্রাসার বাগান বিক্রি করায় স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আতিয়া ফেরদৌস কাকলী নিজ প্রতিষ্ঠানের বাগান বিক্রির ব্যাপারে আসলেই কি কিছু জানেন না! নাকি জেনেও কি না জানার ভান করছে? তাকে না জানিয়ে বাগানটি বিক্রি করলে তিনি এখনো কেন লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি এ নিয়েও রয়েছে নানা ধোঁয়াশা। অভিযোগ রয়েছে তিনিও বিগত সময়ে কাউকে না জানিয়ে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এভাবেই বাগান বিক্রি করে দিতেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামীলীগ নেতার সহযোগিতায় মাদ্রাসার অধ্যক্ষ একজন বিএনপি নেতার কাছে গোপনে বাগান বিক্রি করে সেই টাকা নিজের পকেটে রেখেছে। এটা খুব দুঃখজনক ব্যাপার।
বাগান বিক্রির ব্যাপারে অভিযুক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
মাদ্রাসা কমিটির দাতা সদস্য মোঃ জয়নাল বলেন, সব নিয়ম মেনে সবাইকে অবগত করেই বাগান বিক্রি করা হয়েছে। কি নিয়ম মেনে বিক্রি করা হয়েছে তা নিয়ে একাধিখ প্রশ্ন করা হলে তিনি এসব নিয়ে সাক্ষাৎ এ কথা বলবেন বলে ফোনের সংযোগ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন।
এ ব্যাপারে মিরকামারী আদর্শ আলীম মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি আতিয়া ফেরদৌস কাকলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, লিচু বাগান বিক্রির ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তারা আমাকে না জানিয়ে বাগান বিক্রি করে দিয়েছে। আর বিগত সময় যে আমি তাদের না জানিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে গাছগুলো বিক্রি করেছি এটা সম্পূর্ণ ভুয়া কথা। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং আগামীকাল একটি মিটিং ডাকা হয়েছে। মিটিং এর মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওহাহেদুজ্জামান বলেন, নিয়মবহির্ভূতভাবে গোপনে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাগান বিক্রির ব্যাপারটা অন্যায় হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ আসেনি, যদি অভিযোগ পাই তবে আমরা খতিয়ে দেখবো।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) সুবীর কুমার দাশ বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে না জানিয়ে বাগান বিক্রি করাটা খুব গুরুতর একটা বিষয়। আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।