তরুণ প্রজন্মকে রক্ষায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা এখনই প্রয়োজন
তৌহিদ উদ দৌলা রেজা: তরুণ প্রজন্মকে নেশায় আসক্ত করতে হিট-নট-বার্ণ বা ই-সিগারেট একটি নতুন অস্ত্র। সিগারেট কোম্পানিগুলো তরুণদের মাঝে ই-সিগারেটের ব্যবহারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কৌশলে ই-সিগারেটের প্রমোশন চালাচ্ছে। যা তরুণ প্রজন্মের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তাই খুব বেশি দেরি হয়ে যাবার আগেই বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে রক্ষায় এখনই ই-সিগারেট বন্ধ করা জরুরি। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনেই ই-সিগারেটকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পাশাপাশি বিদ্যমান অর্থ আইনে প্রদত্ত ই-সিগারেট আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য ক্ষতি বিবেচনা করে ইতিমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম রক্ষার স্বার্থে এ মূহুর্তে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের বিকল্প নেই।
রবিবার বিকাল ৩ টায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষণা সেল-ট্যোবাকো কন্ট্রোল এন্ড রির্সাচ সেল (টিসিআরসি) ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের যৌথ উদ্যোগে ”ই-সিগারেট: স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও প্রতিরোধে করণীয়” শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।
ওয়েবিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত। তিনি বলেন, ই-সিগারেট ধূমপান ছাড়ার কোন উপায় হতে পারেনা, বরং এটি নতুন আরেকটি নেশায় আসক্ত হওয়ার শুরু। ই-সিগারেট স্পষ্টভাবেই একটি ড্রাগ যা আমাদের দেশে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি ই-সিগারেটের স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ এর বিভিন্ন ধরনের প্রভাব তুলে ধরেন এবং আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বা যেভাবেই ই-সিগারেট আমদানী করা হচ্ছে তা নির্ণয় করে আমদানী বন্ধের উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানান। বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে ই-সিগারেটের ভয়াবহতা থেকে দূরে রাখতে অতিদ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন মাননীয় সংসদ সদস্য ও টিসিআরসির প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এবং সভাপতি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী জনাব হেলাল আহমেদ। ওয়েবিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তি এবং আর্ন্তজাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্য করে তামাক কোম্পানীগুলো ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েবসাইট ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। এছাড়াও যারা ধুমপান ছাড়তে চায় তাদেরকে প্রচলিত সিগারেটের বদলে ই-সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত করছে। ই-সিগারেটের প্রসার বন্ধে এখনই কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। আমি ইতিমধ্যেই সংসদে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছি এবং আমরা সকল সংসদ সদস্য মিলে ই-সিগারেটের ভয়াবতা থেকে তরুণদের রক্ষা করতে কঠোর আইন প্রণয়নসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবো।
ড. রুমানা হক বলেন, তামাক কোম্পানি সবসময়ই বিভিন্ন কূট-কৌশল অবলম্বন করে দেশের জনম্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে ফেলে। বর্তমানে তারা দেশে ই-সিগারেট আমদানি ও প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে এবং তরুণদের এই নেশায় আসক্ত হওয়ার প্রেরণা দিচ্ছে। ই-সিগারেট নিষিদ্ধে তিনি বেশকিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিয়ে স্পষ্ট কোন আইন না থাকায় অহরহ যত্রতত্র ই-সিগারেট বাংলাদেশে আমদানি ও বিক্রয় করা হচ্ছে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে। সিগারেট কোম্পানীগুলো ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর বলে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করছে। তবে ইতিমধ্যে ই-সিগারেটের ভয়াবতা থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য ভারতসহ বিশে^র ৪২ টি দেশে ই-সিগারেট এবং ঐঞচ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ৫৬টি দেশ ই-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয়ের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। আমাদেরকেও অতিদ্রুত ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।
ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন এইড ফাইন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা, স্কোপের কাজী এনায়েত হোসেন, আরডিসির আব্দুর রহমান, সাবলম্বীর কাজী হাফিজ, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষে বেলাল হোসেন, আমিরুল ইসলাম লিন্টুসহ আরো অনেকে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মীগণ জুম সফটওয়ারের মাধ্যমে আলোচনা সভায় যুক্ত হন।