নেত্রকোণায় মুজিববর্ষেই সবক’টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণ হচ্ছে শহীদ মিনার
মেহেদী হাসান আকন্দ: স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার সবক’টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। গত বছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন থেকে মুজিববর্ষের কর্মসূচী শুরু হয়েছে। এবছর স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে মুজিববর্ষের সঙ্গে চলবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানও। মুজিববর্ষ স্বরণীয় করতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে এবং প্রাথমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের চেতনা জাগ্রত করতে প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামাজিক সহযোগিতা, স্থানীয় উদ্যোগ ও অর্থায়ন এবং কোন কোন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা তাদের টাকা দিয়ে সহযোগী হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার নির্মাণ করছেন।
নেত্রকোণার ১০টি উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেই ছিল না মহান ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস পালন করতে গিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই শ্রদ্ধা জানাতে পারতোনা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি। অনেক স্থানে আবার কলাগাছ ও বাঁশ-কাঠ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শ্রদ্ধা জানাতে হতো।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোণায় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার ছিল। বর্তমানে এ জেলায় প্রায় ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মুজিববর্ষের মধ্যেই শেষ হবে শতভাগ নির্মাণ কাজ। এসব শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা খুশি। জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মাঠে শোভা বাড়াচ্ছে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি। এখন থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
জেলায় মোট ১৩১৪টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সদর উপজেলায় ২০১টি, বারহাট্টা উপজেলায় ১১০টি, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ৮৯টি, খালিয়াজুরী উপজেলায় ৬২টি, আটপাড়া উপজেলায় ১০৩টি, মদন উপজেলায় ৯৪টি, কেন্দুয়া উপজেলায় ১৮২টি, পূর্বধলা উপজেলায় ১৭৫টি, দূর্গাপুর উপজেলায় ১২৬টি, কলমাকান্দা উপজেলায় ১৭২টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী সফল ও স্মরণীয় করতে সরকারের শিক্ষা বিভাগ নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ অন্যতম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য জীবন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং তা শতভাগ কার্যকর করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষা বাঙালির আবেগ। এ ভাষা আমাদের আত্মত্যাগের ফসল। আর ৫২’র ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতি চিহ্ন হলো আমাদের শহীদ মিনার। ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী বীর সন্তানদের অজেয় চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিয়ে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতেই প্রতিটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ শতভাগ বাস্তবায়ন করা হবে।