কুল রেখে রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকার অভিযোগ প্রধান শিক্ষক নাসিরের বিরুদ্ধে
পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দুধবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন স্কুলে না গিয়ে রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন। স্কুলে না গিয়ে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিয়নের বর্ধিত সভায় যোগ দিচ্ছেন তিনি। এ নিয়ে ওই গ্রামের অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর জানলেও প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নিতে সাহস পাচ্ছেন না। অথচ সরকারি চাকুরী বিধিতে সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি কোনো রাজননৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে জড়িত থাকার সুযোগ নেই।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দিন পাথরঘাটা রোকনপুর রেজিস্টার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকা অবস্থায় উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হন। এরপর ২০১৪ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়ে যায়। কিন্তু সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করলেও নাসির উদ্দিন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ ধরে রাখেন।
রাজনীতি করার কারণে তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হতেন না। এ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নাসির উদ্দিনকে ২০১৯ সালের অক্টোবরের দিকে দুধবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে শিক্ষা অফিস। এরপরেও তিনি বিদ্যালয় না গিয়ে রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকেন নাসির উদ্দিন। এই অবস্থায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হলেও নাসির উদ্দিন স্কুলে না গিয়ে উপজেলার দিলপাশার অষ্টমনিষা ও খানমরিচ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) স্কুলে না গিয়ে তিনি জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের বর্ধিত সভা ও সদস্য সংগ্রহ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দুধবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারি শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি রাজনীতি করার কারণে মাঝে মধ্যেই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন। মঙ্গলবার পাবনায় দলের একটি মিটিং থাকায় স্কুলে যাননি বলেও জানান ওই শিক্ষক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আছেন বলে স্বীকার করেন। সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত থাকতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি, আপনার সাথে পরে কথা বলছি।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারি চাকুরী বিধিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারবেন না। করোনার কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। আর নাসির উদ্দিনের বিষয়টি জানা নেই, কেউ অভিযোগও দেয়নি। আপনি যেহেতু বললেন আমরা খতিয়ে দেখবো।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ বিধি ২৫ এ উল্লেখ রয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী কোনো রাজনৈতিক দলের বা রাজনৈতিক দলের কোনো অঙ্গ সংগঠনের সদস্য হতে বা কোনোভাবে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশে অথবা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ বা কোনো প্রকার সহযোগিতা করতে পারবেন না।