বিদেশি ষড়যন্ত্রে ধ্বংসের দাঁড়প্রান্ত বিড়িশিল্প
নিজস্ব প্রতিনিধি : ‘মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা সহ্য করতে না পেরে বিড়ি মালিকরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রে দেশের প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্পকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে। বিড়িকে ধ্বংস করে সিগারেটের মাধ্যমে মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বিড়ি কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছে। অন্য কাজ না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।’
শনিবার (২ এপ্রিল) পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে বিড়ি শ্রমিকদের সমাবেশে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এদিন বহুজাতিক কোম্পানির আগ্রাসন থেকে বিড়ি শিল্প রক্ষার্থে এবং আগামী বাজেটে বিড়িতে শুল্ক কমানোসহ ৬ দফা দাবিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আয়োজিত সংগঠন পাবনা জেলা বিড়ি মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি মো. হারিক হোসেনর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. শামিম হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াসমিন জলি, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক সরদার মিঠু আহমেদ, পাবনা জেলা বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাসেল, জাতীয় শ্রমিক লীগের পাবনা জেলা সভাপতি মো. ফারকান আলী, সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার সাহা, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি আমিন উদ্দিন (বিএসসি), সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গফুর, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলু, বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক লুৎফর রহমান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. মো. রুহুল আমিন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের দেশের শ্রমিকদের বড় একটি অংশ কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, শারীরিক বিকলাঙ্গ, বিধবাসহ অসংখ্য শ্রমিকের পরিবারে রুটি-রুজি নির্ভর করে বিড়ি শিল্পের উপর। দেশের প্রাচীন শ্রমঘন বিড়ি শিল্প বন্ধে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রে বিড়ির উপর চালানো হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা। মাত্রাতিরিক্ত পরের বোঝা সহ্য করতে না পেরে বিড়ি মালিকরা কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বিড়ি কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করছে। কর্মসংস্থান না থাকায় পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। অন্য কাজ না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। এছাড়াও বিড়ির উপর শুল্ক বৃদ্ধি হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা শুল্ক ফাঁকি দিতে জাল ব্যান্ডরোল ও ব্যান্ডরোলবিহীন নকল বিড়ি তৈরি করে বাজারজাত করছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
বিড়িশিল্পকে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রে ধ্বংস করা হচ্ছে দাবি করে বক্তারা আরও বলেন, ‘বিড়ি শিল্প দেশের শ্রমিকবান্ধব শিল্প। বিড়ি শতভাগ দেশীয় প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। এতে ব্যবহৃত সকল কাঁচামাল দেশে উৎপাদিত। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত বিড়ি শ্রমিকদের অন্নসংস্থানের একমাত্র মাধ্যম বিড়িশিল্প। অথচ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির ষড়যন্ত্রে এই শ্রমঘন শিল্পটিকে ধ্বংস করা হচ্ছে। তারা এদেশের মানুষের ফুসফুস পুড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। বাংলাদেশের ব্রিটিশ বেনিয়াদের ও নব্য মীর্জাফর আত্মা এবং প্রজ্ঞা বিড়ি শিল্প ধ্বংস করতে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে গবেষণার নামে তারা বহুজাতিক কোম্পানির সাজানো নাটকের মঞ্চায়ন করে মনগড়া ফল প্রকাশের মাধ্যমে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও বিদেশি কোম্পানির যোগসাজশে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে পরিদর্শন ব্যতিরেকে অস্তিত্বহীন কারখানার লাইসেন্স প্রদান করে যাচ্ছে। ফলে নকল বিড়ির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
ভারতের বিড়িশিল্পকে রক্ষায় নানা উদ্যোগ তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিড়িকে কুটির শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বিড়ি মালিক ও শ্রমিকদের কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালু করেছে। দেশীয় বিড়িশিল্প সুরক্ষায় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা অনুমোদন দেয়া হয় না। দেশীয় শিল্পের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম শুল্কহার ধার্যের পাশাপাশি দেয়া হচ্ছে নানা ধরনের প্রণোদনা। বিড়ি শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে বৃত্তির ব্যবস্থা, চিকিৎসার জন্য রয়েছে পৃথক হাসপাতাল, সরকারের পক্ষ থেকে রয়েছে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা, মালিক ও শ্রমিকদের জন্য রয়েছে ঋণের ব্যবস্থা, এবং রুপির বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা। কিন্তু বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী অবস্থান নেয়া হয়েছে।’
সমাবেশে আয়োজিত সংগঠনের পক্ষ থেকে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো- ১. ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে বিড়িতে বিদ্যমান শুল্ক কমাতে হবে; ২. বিড়ির ওপর অর্পিত অগ্রিম ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করতে হবে; ৩. বিড়ি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান করতে হবে; ৪. বিড়ি শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে; ৫. সরেজমিনে পরিদর্শন ব্যতিরেকে বিড়ির কারখানা লাইসেন্স প্রদান বন্ধ করতে হবে এবং ৬. কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নকলবাজদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।