সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে ৯৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ; তদন্ত কমিটি গঠন
পাবনা প্রতিনিধি : ভুয়া ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পাবনা বেড়া উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (বর্তমানে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত) মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলার পর খাদ্য অধিদফতর থেকে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী সপ্তাহে বেড়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে তদন্তে যাবেন।
পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান জানান, গত ২৩ মার্চ খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক সেলিমুল আযম স্বাক্ষরিত এক পত্রে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের সহকারী উপ-পরিচালক কুমুদ রঞ্জনকে। অপর সদস্য হলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ নিরিক্ষা অডিটর আব্দুল্লাহ আল মামুন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোহম্মদ জামাল উদ্দিন ২০১৮-১৯ ও ২০২৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার কৈটোলা গ্রামের খাদ্যবান্ধব ডিলার কেরামত আলী, বজলুল করিম, ফকরুল ইসলাম, মাসুমদিয়ার ইকবাল হোসেনসহ ১৬ জন ডিলারের নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা ট্রেজারি চালানে সোনালী ব্যাংকে জমা না দিয়ে নগদ টাকা নিজেই গ্রহন করেন। পরে কম্পিউটারে ভুয়া ট্রেজারী চালান তৈরি করে তা অফিসে সংরক্ষণ করে ওই টাকা তিনি আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ উঠে।
এক্ষেত্রে সরকারি নিয়ম হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির ডিলাররা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি হেডে ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার পর তার এক কপি চালান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিসে জমা দিয়ে খাদ্যের ডিও নিতে হবে। তারপর সেই ডিও মোতাবেক তারা খাদ্যগুদাম থেকে মাল উত্তোলন করবেন।
এখানে তৎকালিন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন সরকারি বিধি-বিধান অমান্য করে ১৬ জন ডিলারকে তার কাছে ট্রেজারী চালানের টাকা জমা দিতে বলেন। তিনি নিজেই ব্যাংকে টাকা জমা দিবেন জানালে ডিলাররা তার কাছে টাকা জমা দেন। এরপর খাদ্য নিয়ন্ত্রক ডিলারদের দেয়া ৯৫ লাখ ১৫ হাজার ৭০ টাকা সোনালী ব্যাংকে ট্রেজারী চালানে জমা না দিয়ে, ৭২টি ভুয়া ট্রেজারী চালান বানিয়ে অফিসে সংরক্ষণ করেন। এরপর তিনি গোদাগাড়ি উপজেলায় বদলী হয়ে যান এবং সম্প্রতি সেখান থেকে পাবনা ফরিদপুর উপজেলায় বদলী হয়ে আসেন।
এর মধ্যে ২০২২ সালের ২ জানুয়ারী বেড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদে যোগদান করেন কাওছারুল আলম। তিনি এ বছরের জানুয়ারী মাসে চালানগুলো যাচাই বাছাই করতে গিয়ে একটি চালান তার কাছে ভুয়া মনে হয়। তখন তিনি সোনালী ব্যাংক ও এজি অফিসে ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ট্রেজারী চালানের তথ্য যাচাই করতে চিঠি দেন। সেখান থেকে যাচাই করার পর অফিসে সংররিক্ষত ৭২টি চালান ভুয়া বলে তিনি নিশ্চিত হন। তারপর এ ঘটনা বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার উর্ধতন কর্মকর্তাকে জানান।
বর্তমান খাদ্য নিয়ন্ত্রক কাওছারুল আলম বলেন, তিনি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়ে উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। জেলায় চালান বিষয়ক একটি মনিটরিং কমিটি থাকে। এ অনিয়মের বিষয়টি জানার পর গত ফেব্রæয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমানের নেতৃত্বে সদর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক রেজাউল হক ও একজন টেকনিকেল ফুড ইন্সপেক্টর বিষয়টি তদন্ত করেন। ঢাকা থেকে খাদ্য অধিদপ্তরের তদন্ত দল আসার পর সবকিছু আরও পরিষ্কার বোঝা যাবে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার কৈটোলার ডিলার কেরামত আলী, মাসুমদিয়ার ডিলার ফকরুল ইসলাম ও হাটুরিয়া-নাকালিয়ার ডিলার ইকবাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তৎকালীন খাদ্য নিয়ন্ত্রক জামাল উদ্দিন ট্রেজারি চালানের টাকা তিনি নিজে ব্যাংকে জমা দেবেন এমন কথা বলে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়েছেন। তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন কিনা তা তাদের জানা নেই।
এ ব্যাপারে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ সবুর আলী বলেন, বিষয়টি তার দৃষ্টিগোচর হওয়ায় উপজেলা খাদ্য কমিটির সভায় রেজুলেশন করে জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। তিনি টাকা আত্মসাতের ঘটনা সত্য বলে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মুহাম্মদ তানভীর রহমান জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন খাদ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তদন্তে আসার কথা রয়েছে। তাদের তদন্তের পর সত্যতা পেলে টাকা আত্মসাতকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে খাদ্য অধিদপ্তর ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বেড়া উপজেলার সাবেক খাদ্য নিয়ন্ত্রক (বর্তমানে পাবনার ফরিদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত) জামাল উদ্দিন বলেন, টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক নয়। শুনলাম তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে আসবে। সেখানেই বিষয়টি প্রমাণ হবে।
এখানে বাইরের কেউ তো অভিযোগ করেনি, আপনার কর্মকর্তাই বিষয়টি যাচাই বাছাই করে আত্মসাতের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছেন, তাহলে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করছেন কেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে জামাল উদ্দিন বলেন, কি করছে না করছে জানা ছিল না। পরে শুনলাম। এখন বিভাগীয় তদন্ত হবে, তারপরই জানা যাবে।