বড় ভাইয়ে মৃত্যুর ১দিন পর ছোট ভাই’র মৃত্যু , দাফনে নেই পরিবারের কেউ !

0

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি : করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। যতদিন যাচ্ছে যেন ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে এই মরণঘাতী ভাইরাস। যেখানে পরিবারের একজনের মৃত্যুর শোক পরিবারকে দুমড়ে-মুচড়ে দেয়, সেখানে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর একদিন পর ছোট ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নিল এই ভাইরাস। পরিবার আত্মীয় স্বজন সবাই থাকলেও কবরে মাটি দেয়ার মত কেউ নেই। নিজের ছেলেও আসেনি কবরে মাটি দিতে।

এই করোনাভাইরাস যেন আপনজনের প্রতি ভালোবাসাকেও কেড়ে নিয়ে গেছে। পাশের ঘরের মানুষ পরিবারের সদস্যরাও ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে ছিলেন। চাচা, ভাতিজা, মামা, দাদা, নাতি কেউ আসেনি ভালোবাসার মানুষটাকে শেষবারের মত দেখার জন্য। লাশ দাফন করে শেষ সময়ে শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি দাফন-কাফন ও সৎকার টিম।
বুধবার (২৮ জুলাই) মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১১নং মোস্তফাপুর ইউপি বাহারমর্দান গ্রামের মো. জিতু মিয়া নিজ বাড়িতে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। সোমবার (২৬জুলাই) একদিন আগেই জিতু মিয়ার বড় ভাই তৈয়ন মিয়াও করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তৈয়ন মিয়ার করোনা পজিটিভ আসে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কয়েকদিন থেকে জিতু মিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তাঁর বড় ভাই করোনা উপসর্গ নিয়ে গত ২৭ জুলাই মারা যান। বড় ভাই এর একদিন পর ছোট ভাইও করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মারা যান। করোনা আক্রান্ত তৈয়ন মিয়ার স্ত্রী সিলেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের লাশ দাফণ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে শেখ বোরহান উদ্দিন (রহ.) ইসলামী সোসাইটি সাংগঠনিক সচিব মো. সোহান হোসাইন হেলালের সাথে যোগাযোগ করলে টিম প্রস্তুত করে দাফন কাফন এর ব্যবস্থা করি আমরা। আমরা দাফন করতে গিয়ে দেখি কেউ লাশের কাছে আসতে চায়না কেউ । পাশের ঘরের ভাতিজা, নাতি, মায়ার আত্মীয়স্বজন সবাই ঘর বন্ধ করে বসে রয়েছেন। কেউ শেষ দেখা দেখতেও আসেননি। একমাত্র ছেলে কবরে মাটি দিতে আসেনি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো।
একদিন আগেই আমরা বড়ভাই মো. জিতু মিয়ার লাশ দাফন করতে আমরা যে পিপিই ব্যবহার করেছিলাম, বৃষ্টিতে ভেজার কারণে সেটা আগুন দিয়ে জ্বালাতে পারিনি। তাদের বলে এসেছিলাম একটু শুকালে আগুন দিয়ে জ্বালাতে। কিন্তু আমরা ছোট ভাইয়ের দাফনে গিয়ে দেখি সেই পিপিইগুলো যেভাবে রেখে এসেছিলাম সেই ভাবেই রয়ে গেছে। আমরা যদি না যেতাম তাহলে হয়তো সেই পিপিইগুলো এভাবেই পড়ে থাকতো।
তিনি আরো বলেন, এই পৃথিবীতে আমরা স্বজন আর বন্ধুত্বের জন্য যে ভালোবাসার বন্ধন সৃষ্টি করেছি জীবনের শেষ বিদায়ে তাদের নিরাপদ দূরত্ব মৃত্যুবরণ করেও কি অনুভব করতে পারব। আমাদের যেসব সদস্যরা আত্মীয় স্বজন না এবং দুনিয়ায় কোন সার্থকতাও নেই। যাদের সীমাহীন পরিশ্রমে খোদার আরশও কেঁপে উঠেছে বলে আমার মনে হয়,তারা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মৃতদের দাফন কাফন ও সৎকার করতে গিয়ে দুনিয়ার মানুষের এই নিষ্টুরতা সব সময় ব্যাথিত করে।
দাফনের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। দাফন-কাফনে অংশগ্রহণ করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এম মুহিবুর রহমান মুহিব, মহাসচিব মিজানুর রহমান রাসেল, টিম লিডার আশরাফুল খান (রুহেল), সাংগঠনিক সচিব সোহান হোসাইন হেলাল, সমাজ কল্যাণ সচিব এম জুনেদ আহমেদ, টিম মেম্বার রেজাউল করিম (সাকিব), তিতুমীর আহমেদ, জুবায়ের আহমদ, মোহাম্মদ সুমন প্রমুখ। সচেতন হোন অন্যকে সচেতনে উদ্ধুদ্ধ করুন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.