কক্সবাজার জেলার টেকনাফে সংঘঠিত অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
গত ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে সংঘঠিত অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
গত ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার বিষয়টি একটি অত্যন্ত অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা। এ ঘটনায় সমগ্র দেশবাসীর ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আইনি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মামলা রুজু হয়েছে এবং মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ও বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে, কোন ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে, তার জন্য ব্যক্তিই দায়ী থাকবেন; প্রতিষ্ঠান দায় নেবে না। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত যৌথ প্রেস ব্রিফিং এর বক্তব্যকে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে সাধুবাদ জানাচ্ছে। এ ঘটনার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সর্বাত্মক আইনি ও প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রদানে তাঁদের যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনকে গভীরভাবে আশান্বিত করেছে। বাংলাদেশ পুলিশ এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্বক ব্যবস্থা গ্রহণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। অ্যাসোসিয়েশন বিশ্বাস করে যে, অতীতের ন্যায় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যকার বিদ্যমান আস্থা, বিশ্বাস এবং আন্তরিক ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ভবিষ্যতে তা আরো দৃঢ় ও সংহত হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গভীর বিস্ময় ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, এ ঘটনাকে উপজীব্য করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফেইসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে নানামুখী অপপ্রচার চালিয়ে চলমান আইনি কার্যক্রমকে প্রভাবিত ও বাধাগ্রস্ত করার জন্য তৎপর রয়েছে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি পেশাদার বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর এ অপচেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এ অশুভ চক্রের এ ধরণের ঢালাও নেতিবাচক প্রচার প্রচারণা সত্ত্বেও তাঁদের মনোবল অটুট রেখে তাঁরা দেশ ও জাতির কল্যানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবেন। আমরা দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ণ আনুগত্যশীল থেকে সংবিধান ও মানবাধিকার সমুন্নত রেখে দেশ ও মানুষের কল্যাণে সর্বদা কাজ করে যাবে।
পুলিশ একটি রাষ্ট্রের দৃশ্যমান অবয়ব হিসেবে বিবেচিত। এ পুলিশ বাহিনীর সদস্যগণই দিনশেষে জনগণের জান ও মালের নিরাপত্তা বিধান করে থাকে। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চায় যে, ব্যক্তির কোনো অপকর্মের দায় বাংলাদেশ পুলিশ বহন করে না। বাংলাদেশ পুলিশ অপরাধীকে কঠোর শাস্তি প্রদানে সবসময় সর্বাত্মক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদাত্ত আহবানে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স থেকে পুলিশের দেশপ্রেমিক সদস্যগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন। বাংলাদেশের ২ লক্ষাধিক পুলিশ সদস্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার রক্ষা ও দেশের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নকরণ, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মেগা ইভেন্টে নিরাপত্তা প্রদানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুঃসময় ও যেকোন ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশপ্রেম ও নিষ্ঠার সাথে পারস্পারিক ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির আবহে একযোগে কাজ করে দেশ ও জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে। জাতিসংঘ মিশনেও পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যগণ অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, অতীতের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধ ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আগামী দিনগুলিতেও দেশ ও মানুষের সেবায় একযোগে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাবে।
প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা নির্দেশিত চলমান করোনাযুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা বাংলাদেশ পুলিশ নিয়মিত পুলিশি কার্যক্রমের পাশাপাশি মানবিক প্রত্যয়ে উজ্জীবিত হয়ে করোনা বিস্তার রোধে প্রানপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। এ লড়াইয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের ৬৬ জন বীর সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন; আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে অনেকেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। শুধু পুলিশ সদস্যই নয়, আক্রান্ত হয়েছেন তাদের পরিবারের অগণিত সদস্য। দেশ ও জনগণের প্রতি গভীর মমত্ববোধ ও নিবিড় দায়িত্ববোধে নিজের জীবন বিপন্ন করে পুলিশ সদস্যরা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সকল ধরনের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনাকালীন এ বিপর্যয়ে প্রিয়জনেরা যখন লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে, লাশ সৎকারে বাঁধা দিচ্ছে অথবা অসহযোগিতা করছে, তেমনই এক জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের নির্ভীক সদস্যরা মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করে মরদেহের সৎকারে মানবিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ করোনাযুদ্ধে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও জনগণের সেবায় আত্মনিবেদিত হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ পুলিশ আজ বৈশ্বিক পরিমন্ডলে রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। জঙ্গি দমনের পাশাপাশি অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ধংসাত্মক কার্যকলাপ প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশের অনেক অকুতোভয় দেশপ্রেমিক সদস্য আত্মোৎসর্গ করেছেন। এছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
পুলিশি সেবাকে প্রান্তিক জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ প্রবর্তন করা হয়েছে যা ইতোমধ্যে জনগণের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। পুলিশের সার্বিক কার্যক্রমে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারিত করে জনগণকে উৎকৃষ্ট সেবা প্রদানে আমরা প্রতিনিয়ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশকে একটি দক্ষ, পেশাদার ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নানাবিধ যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে গণতন্ত্রের বিকাশ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সামাজিক স্থিতিশিলতা নিশ্চিত করে এ উন্নয়নের অন্যতম প্রধান সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি, আমাদের আগামী দিনের পথ রচিত হবে সৌহার্দ্যে, সম্প্রীতি ও সহযোগিতায়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সমবেত অংশগ্রহণ ও নতুন প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা একযোগে দেশ ও মানুষের কল্যাণে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব। অতীতের ন্যায় বর্তমান সময়েও স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং জনবান্ধব পুলিশি কার্যক্রম নিশ্চিতকল্পে এ দেশের মানুষ সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে বলে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আন্তরিকভাবে প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সুশীল সমাজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সর্বসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছে।