আমার জনপ্রিয়তায় দিশেহারা হয়ে প্রলাপ বকছে অন্য প্রার্থীরা : সৈয়দ মুনতাজ আলী

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ মুনতাজ আলী বলেছেন, আমার জনপ্রিয়তা, সর্বশ্রেণির মানুষের ভালোবাসা ও সাধারণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ততা আর গণজোয়াড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের কর্মি সমর্থকরা। দিশেহারা হয়ে প্রলাপবাক্য ছড়াচ্ছেন নৌকার প্রার্থী উম্মাত আলী ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে বহিস্কৃত আনারস প্রতীকের প্রার্থী আরিফুল ইসলাম আরিফ। সাধারণ মানুষ জানে আমি কি, কেমন। এসব প্রলাপ বকে মানুষের মন জয় করা যায় না।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) স্থানীয় গণমাধ্যমের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি।

সৈয়দ মুনতাজ আলী বলেন, আমি একজন প্রকৃত ব্যবসায়ী। বিভিন্ন কোম্পানীর বেশ কয়েকটি ডিলারশীপ রয়েছে আমার। ওই ব্যবসা থেকে আমার যে বৈধ আয়। সেই আয় থেকে আমি সামাজিক নানা রকম সহায়তামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করি। ইতোমধ্যে মধ্যে সৈয়দ ফজলুর রহমান-মমতাজ বেগম-মুনতাজ আলী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করেছি। ওই ট্রাস্ট থেকে একটি বয়স্ক মানুষের জন্য আশ্রয়স্থল করেছি। এলাকার গরীব, অসহায়, দুস্থ ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন না, বিবাহযোগ্য মেয়ের বিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক অনুদান বা সহায়তা দিয়ে থাকি। করোনাকালীন এই ইউনিয়নে প্রায় ২৫ হাজার মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। প্রতি কোরবানী ঈদে অসহায়, দুস্থ ও নিম্নআয়ের মানুষকে কোরবানীর গোস্ত বিতরণ করি। এছাড়াও এই ইউনিয়নের সর্বশ্রেণির মানুষের জন্য বিনা খরচে আ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দিয়ে আসছি।

তিনি বলেন, সততা, ন্যায় ও নিষ্ঠা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে ইতোমধ্যে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা চলে আসছে। এই জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছেন এক শ্রেণির হিংসা, পরশ্রিকাতর মানুষ। তাদের যত বাঁধাই আসুক, আমাকে দমাতে পারবে না। আমার কাজ আমি চালিয়ে যাবো। মানুষের ভালোবাসা থাকলে এই মিথ্যা, মনগড়া অপবাদ আমার কিছুই করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন, আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া, জননেত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের একজন নগন্য কর্মি হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। আমি দলের বিরুদ্ধে নই। আমি এলাকার মানুষের ভালোবাসা আর তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। দলীয় আমার কোন পদ পদবী নেই। তবে দলের প্রতি ভালোবাসার কোন কমতি নেই। পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামীলীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্সের প্রত্যেকটি নির্বাচন একনিষ্ঠভাবে করেছি। আসন্ন মালিগাছা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমি দলের কাছে কোন মনোনয়ন চাইনি। নিজের কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করতে পেরেছি, মানুষ কতটুকু আমাকে ভালোবাসেন, সেটাই এই নির্বাচনের ফলাফলে জানতে পারবো। কারণ তাদের দাবীর প্রেক্ষিতেই আমি প্রার্থী হয়েছি। কোন ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নই।

নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা ও কালো টাকার ছড়াছড়ির অভিযোগের বিষয়ে এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বংশে সবাই এক মত এক দল থাকে না। সবারই ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দর্শণ ও সামাজিকতা রয়েছে। আমি আওয়ামীলীগ করি। কেউ অন্য দল করতেই পারে। এটাতো আমার ব্যক্তিগত কোন বিষয় নয়। এখানে মিথ্যা ও কাল্পনিক এবং মনগড়াভাবে আমাকে জঙ্গী সম্পৃক্ততার বিষয়ে মানহানি করা হচ্ছে। আর কালো টাকার ছড়াছড়ি বা ভোট কেনার কোন প্রশ্নই আসে না। কেউ একটা প্রমাণও দেখাতে পারবে না। আসলে যারা এই অপপ্রচার চালাচ্ছেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে বিষদগার কথা রটাচ্ছেন। তারা আসলে আমার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মিথ্যা কথা বলেছেন।

সৈয়দ মুনতাজ আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, সত্য কখনো লুকানো যায় না। আর মিথ্যা দিয়ে কখনো সত্যকে চাপা রাখা যায় না। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উম্মাত আলী তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি কিন্তু হাইব্রিড আওয়ামীলীগ। বিদ্রোহী প্রার্থী আরিফুল ইসলাম আরিফ। তার ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম শরীফ। তিনিও হাইব্রিড আওয়ামীলীগ। সাবেক চেয়ারম্যান উম্মাত আলী ইউনিয়ন কমপ্লেক্স ও বহুতল মার্কেট নির্মাণের নামে কোটি কোটি টাকা পজিশন বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছেন। যে টাকা এখনও তিনি পরিশোধ করতে পারেননি। পারেননি মার্কেট ও বহুতল মার্কেট আলোর মুখ দেখাতে।

সৈয়দ মুনতাজ আলী বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান শরীফুল ইসলাম শরীফ সুকৌশলে টেবুনিয়া বাজার থেকে ইউনিয়ন পরিষদ স্থানান্তর করে নিয়ে গেছেন অন্যত্র। এই ইউনিয়নের প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষের যাতায়াতের খুব সহজ ছিল টেবুনিয়া বাজারে অবস্থিত এই ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি। অথচ মানুষের সীমাহীন কষ্ট দিয়ে বাজার থেকে কয়েক কিলো ভিতরে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নানা অনিয়ম, মানুষের সাথে সীমাহীন দূর্ব্যবহার, দূর্ভোগ ছাড়া কিছুই দিতে পারেননি। দুর্নীতির একটি আখড়াতে পরিণত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদ।

তিনি বলেন, এই ইউনিয়নের ছোট থেকে বড় সবাই জানে। আফুরিয়া পাটিকাবাড়িতে ফাস্ট ফিলিং যৌন উত্তেজক সিরাপ উৎপাদক ও ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম আরিফ হয়েছেন আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। যিনি সারাদেশে এই সেক্সুয়াল সিরাপ সরবরাহ করে যুবসমাজ তথা সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত করেছেন। তিনি কি করে এই ইউনিয়নবাসীকে জনসেবা দেবেন। এই সেক্সুয়াল সিরাপ বিক্রি করে রাতারাত্রি তিনি কোটিপতি বনে গেছেন।

স্থানীয়ভাবে অভিযোগ রয়েছে এমন দাবী করে সৈয়দ মুনতাজ বলেন, এই ব্যবসার অন্তরালে ঠিকাদারী সেলেটমেন্ট, চেয়ারম্যান ভাইয়ের নেপথ্যে ছায়া চেয়ারম্যান হয়ে শালিস বিচার, ভুমি দখল, দস্যুপনা, ছোট মনোহরপুরে বাংলো বানিয়ে সেখান থেকে অনৈতিক নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝণানি। সম্প্রতি আরিফুল ইসলাম আরিফ গাছপাড়ায় একটি হত্যা মামলার অন্যতম আসামী। মামলা দায়েরের পর তিনি আত্মগোপনে ছিলেন ঢাকাতে। ডিবি পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।

সৈয়দ মুনতাজ আলী বলেন, আমি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজে কোন হানাহানি চাই না। আমি চাই আমার ইউনিয়নের মানুষ শান্তিতে থাক। সুস্থ্য ও নিরাপদে থাক। আমি চেয়ারম্যান হতে পারবো কিনা সেটা নিতান্তই জনগণের রায়। তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আগামী ২৬ ডিসেম্বর সাধারণ মানুষ তথা ভোটাররা যেন নিজে ভোাট কেন্দ্রে এসে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন এটি চাই।

তিনি আরও বলেন, আমাকে নির্বাচনী মাঠ থেকে সড়াতে এমন নানা কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। আমার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর, আমার কর্মি সমর্থকদের মারপিট, তাদের হত্যার হুমকি, প্রচারে বাঁধা, পোস্টার ছেড়া সব রকম হয়রানী করা হচ্ছে। তবুও আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীক ও বিদ্রোহী আনারস প্রতীকের প্রার্থীসহ নেতাকর্মি ও সমর্থকেরা উঠে পড়ে লেগেছে। আমি তাতে একটুও বিচলিত নই।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.