শুভ জন্মদিন- ইতিহাস ঐতিহ্য ও সুন্দরবন বেষ্টিত সাতক্ষীরা জেলা

0

রিজাউল করিম, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আজ (২৫ শে ফেব্রায়ারি) আমাদের প্রাণের জেলা সাতক্ষীরার জন্মদিন। ১৯৪৬ সালের ২১ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মহকুমা এবং ১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গোপসাগরের তীরে বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের কোল ঘেঁসে আছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরা। এর উত্তরে যশোর জেলা পূর্বে খুলনা জেলা পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা অন্যতম। সাতক্ষীরা জেলার অবস্থান-বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকুলিয়ঞ্চলে। সাতক্ষীরার পূর্বনাম- সাতঘরিয়া। সাতক্ষীরা অবস্থিত- খুলনা বিভাগে। সাতক্ষীরা জেলার আয়তন- ৩,৮৫৮ বর্গ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা জেলার লোকসংখ্যা- ২৫ লক্ষ প্রায়। সাতক্ষীরা জেলার ৭টি উপজেলা এবং ৮টি থানা, সাতক্ষীরা জেলার ৭৯টি ইউনিয়ন । সাতক্ষীরা জেলার পৌরসভা-২টি। যথা- সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া। সাতক্ষীরা জেলার গ্রাম -১৪৮০টি । মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ২য় শত্রুমুক্ত জেলা হলো- সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা জেলা শত্রুমুক্ত হয়- ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর। সাতক্ষীরা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়-১৯৮৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা- সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলা। সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন- কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদন কারী জেলা- সাতক্ষীরা। বাংলাদেশের দুধ এর গ্রাম বলা হয়- সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জিয়ালা গ্রামকে। বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ রপ্তানী আয় হয় হিমায়মতি মাছ থেকে বিশেষ করে গলদা ও বাগদা চিংড়ি। সেটাতেও আমাদের সাতক্ষীরার বড় অবদান। এছাড়া ও সাতক্ষীরার মাছ ঢাকা চট্ট গ্রামসহ সারাদেশে জনপ্রিয়। হোয়াইট গোল্ডের দেশ বলা হয় যৌথভাবে- সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটকে। ঢাকা বিশব্যবিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার দিক দিয়ে আমার সাতক্ষীরার অবস্থান বর্তমানে ৫ম। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একই অবস্থা। সাতক্ষীরা জেলার সাক্ষরতার হার- ৬৬%।

সাতক্ষীরা জেলার সাক্ষরতার আন্দোলনের নাম “উদ্দীপ্ত সাতক্ষীরা”। “সাতক্ষীরার ইতিহাস” একটা দেশের মোট আয়তনের ২৫% বন থাকা উচিত । বাংলাদেশের ৭টি জেলার মধ্যে আমাদের সাতক্ষীরা একটি। সম্ভাব্য বিশ্ব সপ্তাশ্চর্য সুন্দরবনের অবস্থান আমাদের সাতক্ষীরায় । বাংলাদেশর ৭ম বড় জেলা আমাদের সাতক্ষীরা। ভোমরা স্থলবন্দর অবস্থিত – সাতক্ষীরা জেলায়। “ভোমরা দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থল বন্দর এবং এটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১৯৯৬ সালে”। বাংলাদেশের দক্ষিণ তালপট্রি অবস্থিত- সাতক্ষীরা জেলায়। “সাতক্ষীরা ইতিহাস” সাতক্ষীরা জেলার সর্বশেষ গঠিত থানা-পাটকেলঘাটা। স্বাধীন ভারতের প্রথম মূখ্য মন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়-টাউন শ্রীপুর, দেবহাটা,সাতক্ষীরা। বাংলার বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী ছিল – ধুমঘাট, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা। মাটির উপর দিয়ে হেলিকপ্টার চলে – সাতক্ষীরায় । সর্বপ্রথম রেন্ট-এ মোটর সাইকেল প্রচলন শুরু হয় – সাতক্ষীরায়। সাতক্ষীরার ১ম শহীদ- শহীদ আব্দুর রাজ্জাক। সাতক্ষীরার ১ম পত্রিকা- দৈনিক কাফেলা। দেশের প্রথম ভাসমান বিজিবি ক্যাম্প চালু করা হয়- সাতক্ষীরা জেলায়। এক জেলা এক পন্য’ সম্ভাব্য রপ্তানীমুখী পন্যের মধ্যে আছে আমাদের সাতক্ষীরার মাটির তৈরি টালি। সাতক্ষীরার কলারোয়ার টালি বর্তমানে ইউরোপের বাজারে বিশেষ করে ইতালিতে রপ্তানি হচ্ছে। সাতক্ষীরার আম এখন রাজশাহী চাপাইনবাবগঞ্জের মতই জনপ্রিয়। শুধু কি তাই? বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে সাতক্ষীরার আম বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যেটা আমাদের অন্যতম সাফল্য। ধান, চাল, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, ফল প্রায়সব কিছু সাতক্ষীরায় হয়। বলতে গেলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাইরে থেকে খুব কম জিনিসই আনতে হয়। “সাতক্ষীরার ইতিহাস”।

সাতক্ষীরা জেলা যে কারণে বিখ্যাত-কুল, মাদুর, গাছের কলম, আম, ওল, মাছ, ঘোল ও সুন্দরবন এর খাঁটি মধু। সাতক্ষীরা জেলার বিখ্যাত খাবার- সাতক্ষীরা ঘোষ ডেইরীর “সন্দেশ”। সাতক্ষীরার ওল সারা বাংলাদেশ সমাদ্রিত। সাতক্ষীরার কুল (বরই) এক নামে সবাই চেনে। কুলের সময় ঢাকাতে মিষ্টি কুল বলতে সাতক্ষীরার কুল। সাতক্ষীরার মানুষের ধর্মীয় সম্প্রীতি অন্যান্য জেলার জন্য দৃষ্টান্ত স্বরুপ।
অন্যান্য জেলার তুলনায় দ্রব্য মূল্যের দাম কম – সাতক্ষীরায়। ইউরোপীয় উপমহাদেশের মধ্যে সর্ব বৃহৎ চিংড়ি প্রকল্প – হরিনগর, সাতক্ষীরা। মোটর সাইকেল সিটি খ্যাত – সাতক্ষীরা। আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নে হরিণের মাথা ও সিং দিয়ে সুন্দর লাঠি তৈরি হয়। যা দেশের আর কোথাও হয় না। হাড়িয়াভাঙ্গা নদী অবস্থিত – সাতক্ষীরা জেলায়। ভারত বাংলাদেশকে বিভক্তকারী নদী- হাড়িয়াভাঙ্গা। সাতক্ষীরা জেলায় বনভুমির পরিমান- ১৪৪৫.১৮ বর্গ কিলোমিটার। সাতক্ষীরা ঘোষ ডেয়ারি বিখ্যাত মিষ্টান্ন তৈরীতে, বিশেষ করে সন্দেশের জন্য। সুন্দরবনে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা নির্ধারণকারী নদী – হাড়িয়াভাঙ্গা। সাতক্ষীরার দুঃখ বলা হয় বেতনা ও কপোতাক্ষ নদীকে। বাংলাদেশের প্রথম বাল্যবিবাহ মুক্ত উপজেলা – সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ। সাতক্ষীরা জেলার দক্ষিণ অবস্থিত – বঙ্গোপসাগর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাতক্ষীরা জেলার উচ্চতা – ১৬ ফুট উচুঁতে। “সাতক্ষীরা ইতিহাস” সাতক্ষীরার মহকুমার প্রকৃত জন্ম – ১৮৫২ সালে।

সাতক্ষীরার আবহাওয়া– লবণাক্ত আবহাওয়া। প্রাচীনকালে সাতক্ষীরা বুড়ন দ্বীপ নামে খ্যাত ছিল। সাতক্ষীরা পৌরসভা কত সালে স্থাপিত হয় -১৯৬৯ সালে। ” সাতক্ষীরার ইতিহাস”। দুবলার চর অবস্থিত সুন্দরবনের দক্ষিণে। সাতক্ষীরা জেলায় প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করা হয় পি এন হাইস্কুল চত্বরে ১৯৬২ সালে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃহৎ শহীদ মিনার স্থাপিত – সাতক্ষীরা শহীদ আঃরাজ্জাক পার্কে। বাংলাদেশের প্রথম গির্জা ঈশ্বরীপুর গির্জা – শ্যামনগর। সাতক্ষীরা সরকারী কলেজ স্থাপিত ১৯৪৬ সালে এবং এর আঞ্চলিক নাম রাজার বাগান কলেজ। সাতক্ষীরা জেলার উল্লেখযোগ্য কয়েকটা দর্শনীয় স্থান সমূহ– সুন্দরবন, মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, মন্টু মিয়ার বাগান বাড়ি, দেবহাটার বনবিবির বটগাছ, জাহাজমারী এবি পার্ক, নলতা পাক রওজা শরীফ ইত্যাদি। ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ (কালিগঞ্জ, নলতা, সাতক্ষীরা) সিকান্দার আবু জাফরের জন্ম- সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে।

লেখক সাহিত্যিক মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলির জন্ম – সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদহা গ্রামে। সাতক্ষীরার আদি/ মুল স্থপতি – প্রাণনাথ রায় চৌধুরী। আধুনিক সাতক্ষীরার রুপপকার – শহীদ স ম আলাউদ্দিন। এশিয়ার বিখ্যাত বাঘমামা বলা হয় পচাব্দীগাজীকে – শ্যামনগর, গাবুরা, সোরা গ্রামে। তার প্রকৃত নাম আঃহামিদ গাজী। দেশের সেরা কন্ঠ শিল্পী সাবিনা ইয়াাসমিনের গ্রামের বাড়ি – সাতক্ষীরার মুকুন্দপুর গ্রামে। “সাতক্ষীরার ইতিহাস” বাংলাদেশ হতে বিদেশী লীগে খেলতে যাওয়া প্রথম মহিলা ফুটবলার সাবিনা খাতুন- সাতক্ষীরা সদর। বাংলাদেশে শিশুরোগ চিকিৎসার পথিকৃৎ জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান – রসূলপুর, সাতক্ষীরা। বাংলাদেশের প্রথম মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ, সাবেক মহিলা-শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী – সাতক্ষীরা। উপমহাদেশে বোর্ড পরীক্ষায় নামের পরিবর্তে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরের প্রবর্তক খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ রহঃ ( নলতা, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা)। বর্তমানে (২০১৭) বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার (সদর সাতক্ষীরা)। বাংলাদেশ আহলে হাদীস এর প্রতিষ্ঠতা ডঃ আসাদুল্লাহ আল গালিব (সাতক্ষীরা)। মুক্তিযুদ্ধের ৯ নং সেক্টরের
প্রতিষ্ঠতা ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার (সাব সেক্টর কমান্ডার) (৭৯) বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম মহিলা কবি আজিজুন নেছা খাতুন (সাতক্ষীরা)। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে সাতক্ষীরার সর্বপ্রথম খেলোয়ার কাজী জিয়াউর রশীদ রূপম। ডঃ তহমিদ, কৃষি বিজ্ঞানী- জাতীয় ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট – পশ্চিম বিড়ালাক্ষী। মহকুমা খুলনা বিভাগের ১ম এম বি বি এস ডাক্তার, ডাঃ বজলুর রহমান – সাতক্ষীরা। বাংলাদেশের ১ম মূখ্য সচীব মুক্তিযোদ্ধা মারহুম রুহুল কুদ্দুস – পাঁচরখী, বাঁশদহা, সাতক্ষীরা। বিজয় বাংলা কিবোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তফা আব্দুল জব্বার – শ্যামনগর। কাতার রাষ্ট্রদূত মাকছুদুর রহমান – আশাশুনি। জমিদার বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী মানচিত্রে সর্বপ্রথম সাতক্ষীরা শব্দ উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলার নামকরণ করেন।

এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার কৃতি সন্তন- আবেদ খান, সাবেক স্বস্থ্যমুন্ত্রি ডাঃ আফম রুহুল হক আমিন খান, , মৌসুমী, রবিউল ইসলাম, সাবিনা খাতুন, ডাঃ সহিদুল আলম, জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক-সাইদ আল জাবির রাজেশ (কলারোয়া), মাওলানা রিয়াছাত আলী বিশ্বাস, আলমগীর কবির রানা, মাওলানা আ.ফ.ম আবু বকর সিদ্দীক-আরবী প্রভাষক-ঢাবি-সাতক্ষীরা সদর, আলহাজ্ব মৌলভী হযরত আলী নূরানী।
সাতক্ষীরার ছেলে মুস্তাফিজুর রহমান এবং সৌম্য সরকারের কথা আর নাইবা বললাম।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.