সব স্টেশনই হবে আধুনিক ও নান্দনিক
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : উন্নত দেশের আদলে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের স্টেশনগুলো। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে পড়বে ২০টি স্টেশন। এর সবকটি স্টেশনই হবে আধুনিক ও নান্দনিক।
জানা যায়, ঢাকার কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। দীর্ঘ এ পথজুড়ে থাকছে ২০টি অত্যাধুনিক স্টেশন। গে-ারিয়া বাদে সব স্টেশনই হবে ৪২৭ বর্গমিটারের। গে-ারিয়ার স্টেশনটি হবে ৫৪৫ বর্গমিটারের। এসব স্টেশনের ভেতরে থাকবে ফুটওভারব্রিজ, চলন্ত সিঁড়ি ও লিফট। নারী ও পুরুষের জন্য থাকবে আলাদা টয়লেট সুবিধা। নামাজের জায়গাসহ প্রতিবন্ধীদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা। ফলে প্রতিবন্ধীরা কারও সহযোগিতা ছাড়াই নিরাপদে স্টেশন ব্যবহার করতে পারবেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে কেরানীগঞ্জ ও পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত পুরো রেলপথ ঢেলে সাজানো হবে। পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং লাইন, ৫৮টি মেজর ব্রিজ, ২৭৩টি মাইনর ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস, ২০টি স্টেশন, ১০০টি ব্রডগেজ কোচ কেনাসহ দুই হাজার ৪২৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের সংস্থান রয়েছে। ঢাকার কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত তিনটি সেকশনে ভাগ করে কাজ করা হচ্ছে। সেগুলো হলো- ঢাকা-মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা ও ভাঙ্গা-যশোর।
কমলাপুর থেকে যশোর পর্যন্ত রুটে ২০টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ১৪টি স্টেশনই হবে নতুন। পুরনো ছয়টি স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হবে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে। কেরানীগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের নিমতলায় নতুন দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপর নির্মাণ করা হবে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর ও মাওয়া স্টেশন। মাওয়া স্টেশনটি হবে তুলনামূলক বেশি নান্দনিক। প্রকল্প অনুযায়ী ‘দূর থেকে এটাকে দেখলে কোন উন্নতমানের শপিংমল মনে হবে।’
মাওয়া স্টেশনের পরে পদ্মা সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরায় নির্মিত হবে ‘পদ্মা স্টেশন’। মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা স্টেশনের দূরত্ব হবে ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ছয় কিলোমিটার পড়বে পদ্মা সেতুতে। তবে সেতুপাড়ের মানুষকে স্টেশন পেতে দুই থেকে তিন কিলোমিটার সড়কপথ পাড়ি দিতে হবে। তবুও খুশি সেতুপাড়ের বাসিন্দারা।
পদ্মা স্টেশনের পরে শরীয়তপুরে হবে ‘শিবচর স্টেশন’। এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গায় উন্নত দেশের আদলে নির্মাণ করা হবে জংশন। ভাঙ্গা থেকে একটি লুপ ফরিদপুর সদর ও অন্য একটি লুপ নাগরকান্দায় গেছে। তবে প্রকল্পের আওতায় নাগরকান্দায় স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এরপরে গোপালগঞ্জের মকসুদপুর ও মহেশপুরে নির্মিত হবে রেলস্টেশন। তারপর নড়াইলের লোহাগড়া, নড়াইল সদরে স্টেশন করা হবে। এরপর যশোরের জামদিয়া ও পদ্মবিলে নির্মাণ করা হবে দুটি নতুন স্টেশন।
প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ছয়টি রেলস্টেশন ঢেলে সাজানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনও। এছাড়া গে-ারিয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন নান্দনিক করে গড়ে তোলা হবে। সংস্কারের জন্য নির্ধারিত অন্য তিনটি স্টেশন পড়ছে সেতুর ওপারে। সেগুলো হলো- গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি, যশোরের সিংগাই ও রুপদিয়া স্টেশন। বিদ্যমান এসব স্টেশন নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে।
রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, কমলাপুর থেকে গে-ারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস এবং ভাঙ্গা স্টেশনে আন্ডারপাস নির্মাণ করা হবে। যেসব স্টেশনে আন্ডারপাসের মাধ্যমে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে যাওয়া যাবে, সেখানে লিফট ও চলন্ত সিঁড়ি থাকবে না। মাওয়া, পদ্মবিল, কাশিয়ানি, রুপদিয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল সুবিধা বাড়ানো হবে।
রেলস্টেশনের স্টাফসহ অন্যদের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে ১০টি স্টেশনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত রেসিডেন্স বিল্ডিং বা আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হবে। এ স্টেশনগুলো হলো- নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, পদ্মা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, লোহাগড়া, জামদিয়া, নড়াইল ও পদ্মবিল জংশন।
পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ওয়ে এ্যান্ড ওয়ার্ক) আবু ইউসুফ মোহাম্মদ শামীম বলেন, ‘রেলসংযোগটি ঢাকার কমলাপুর থেকে শুরু হবে, এরপর নারায়ণগঞ্জে যাবে। গে-ারিয়া হয়ে চলে যাবে শ্যামপুরে। নারায়ণগঞ্জের পাগলা হয়ে ডান দিকে মোড় নেবে। সেখান থেকে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে লাইন কেরানীগঞ্জে ঢুকবে। কেরানীগঞ্জ পার হয়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে জাজিরায় পৌঁছবে। প্রকল্পের নক্সা ও লক্ষ্য অনুযায়ী এ রুটে গতি থাকবে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার।’
অত্যাধুনিক স্টেশন নির্মাণ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যতটা সম্ভব স্টেশনগুলোতে যাত্রীদের সুবিধা বাড়ানো হবে। বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যেসব যাত্রী থাকবেন, তাদের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। এসব যাত্রীরা যাতে এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্য প্ল্যাটফর্মে সহজে যেতে পারেন সেজন্য ফুটওভারব্রিজের সঙ্গে লিফট ও এস্কেলেটরের (চলন্ত সিঁড়ি) ব্যবস্থা করা হবে।’
জানা যায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীনা ঋণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ এবং সরকারী অর্থায়ন ১৮ হাজার ২১০ কোটি টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫৪ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ। তিনটি অংশে বিভক্ত হয়ে এগিয়ে চলেছে রেলপথ নির্মাণকাজ। সরেজমিনে দেখা গেছে, মাটি ভরাটসহ সব স্থানেই নির্মিত হয়েছে রেলওয়ে ব্রিজ। এছাড়া দৃশ্যমান হয়েছে মাওয়া স্টেশনের কাজও। ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া মাওয়া-ভাঙ্গা ৭৭ ও ভাঙ্গা থেকে যশোরের অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ।
প্রকল্পের অগ্রগতি বিষয়ে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক সময় অপচয় হয়েছে। সব কিছু কাটিয়ে দ্রুতগতিতে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ না, সারাদেশে ইতিবাচক আর্থিক প্রভাব পড়বে। প্রকল্পের সুফল পৌঁছে দিতে আমরা দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করছি। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে।’