রাজস্ব আহরণে ৩ লাখ কোটির মাইলফলক
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনা মহামারীর অভিঘাতে চরম অনিশ্চয়তায় বৈশ্বিক অর্থনীতি। এ অনিশ্চয়তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই রাজস্ব আহরণে ৩ লাখ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও আয়কর মিলে ৩ লাখ ১৭৭ কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ১৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার আগের বছরের চেয়ে কম হলেও আদায় বেড়েছে। আগের ২০২০-২১ অর্থবছর রাজস্বে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশ। আদায় ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা ঘাটতি। অবশ্য গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রায় কোনো কাটছাঁট করা হয়নি। মূল লক্ষ্যমাত্রা যা প্রাক্কলন করা হয়েছিল, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রায় সেটিই বহাল রাখা হয়। মোট বাজেটের ৮৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেওয়া হয় এনবিআরের সংগৃহীত রাজস্বের মাধ্যমে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম আমাদের সময়কে বলেন, সাময়িক হিসাব নিয়ে কথা বলতে চাই না। চূড়ান্ত হিসাবের পরে এ বিষয়ে কথা বলব। চূড়ান্ত হিসাবে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগেও চলতি অর্থবছরের রাজস্ব অর্জনের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রীয়ভাবে ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ’ কমিটি এটি নির্ধারণ করে দিচ্ছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতার প্রতিফলন থাকে না। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে অনেকটা পিছিয়ে থাকে এনবিআর। এ পিছিয়ে থাকার কারণে সরকারকে কঠিন শর্তের ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটাতে হয়। এদিকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের নেওয়া ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৩ শতাংশ বেশি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় চলতি অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করা বাস্তবে সম্ভব হবে না। এনবিআরের তিন লাখ কোটি টাকার মাইলফলক স্পর্শ করতে পারাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল ঘাটতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। সে বিবেচনায় এনবিআর ভালো করেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ বলেন, আমাদের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাতে কেবল ৮-৯ শতাংশ। এটা সর্বনিম্ন ১৫ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু এ জন্য এনবিআরের পাশাপাশি সরকারকেও কাজ করতে হবে। এক কথায় কর দিতে আগ্রহী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা কর দেয়, সরকারি সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কর দেওয়া বা না দেওয়া উভয় ক্ষেত্রেই সেবার মান একই হলে জনগণ কর দিতে আগ্রহী হবে না। তখন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যেসব করদাতা নিয়মিত কর দেয়, তাদের কাছ থেকেই বেশি কর আদায়ে আগ্রহী হবে এনবিআর। এতে করে সৎ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই কিছু সংস্কারমূলক কার্যক্রম হাতে নিয়ে করদাতার আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধি করতে হবে।