বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমায় দেশে চ্যালেঞ্জ কমছে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করায় দেশের জ্বালানি খাতে কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। মার্কিন ডলারের ঊর্ধ্বগতির সময়ে তেলের দামের এই নিম্নগতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমবে। এর ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) এখন যে লোকসান গুনছে, তা-ও কমতে শুরু করেছে। তেলের স্বাভাবিক মজুত ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা অপেক্ষাকৃত সহজ হচ্ছে। একই সঙ্গে চলমান সাশ্রয়নীতি বাস্তবায়নের ফলে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কাও অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।
জ্বালানি বিভাগ ও বিপিসির একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা সাম্প্রতিক বাজার বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানিয়েছেন। তারা বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিপিসির কাছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের অন্তত ৪৫ দিনের মজুত থাকে। সেই পরিমাণ মজুত এখন নেই। ডলারের বিপরীতে টাকার মানে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় পতন হওয়ার পাশাপাশি গত এক মাস যাবত আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতা এবং বিক্রেতাদের বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার কারণে মজুত কমেছে। এখন বিশ্ববাজারে দাম কমতে থাকায় দেশে তেল আমদানিতে আগের গতি ফিরবে। আর আমদানি বাড়লে দেশে বিদ্যমান জ্বালানি ও বিদ্যুতের সরবরাহ ঘাটতি কমবে।
জ্বালানি ঘাটতি সংকটের এই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে কিছু পরিবর্তন এসেছে। আগামী বছর জ্বালানি তেলের চাহিদা কমবে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদি আরব সফর থেকে তেলের সরবরাহ বৃদ্ধির যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হলেও তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে এই সফরও ভূমিকা রাখছে। এছাড়া চীনের কয়েকটি রাজ্যসহ কিছু দেশে ফের করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় সেখানে তেলের ব্যবহার কমেছে। এর মধ্যে খাদ্য সরবরাহে জাতিসংঘের উপস্থিতিতে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চুক্তিও নতুন আশা দেখাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম গত ৮ মার্চ ছিল ব্যারেলপ্রতি (প্রায় ১৫৯ লিটার) ১১৯ ডলার ৬৫ সেন্ট। এরপর আস্তে আস্তে কমে তেলের দাম। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে অপরিশোধিত তেলের দাম ১২৯ ডলারে উঠে যায়। এরপর আবার কমতে শুরু করে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই। দ্বিতীয় সপ্তাহে তা ১০০ ডলারের নিচে নামে। গত রবিবার এই তেলের দাম কমে ৯৪ ডলারে ঠেকেছে। আগামী ১০ দিন দর ওঠানামার মধ্যে থাকলেও চূড়ান্তভাবে তা কমবে বলেই পূর্বাভাস রয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, জ্বালানি তেলের মধ্যে দেশে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ডিজেলের। ডিজেল মজুতের ক্ষমতা ৬ লাখ ৪ হাজার ৪৯৫ টন। গত রবিবার পর্যন্ত বিপিসির মজুতাগারে ছিল প্রায় ৪ লাখ টন ডিজেল। এই তেল প্রতিদিন ১২-১৩ হাজার টন ব্যবহৃত হচ্ছে। আগে ১৬ হাজার টনের চাহিদা ছিল। ডিজেলের ৭২ শতাংশ পরিবহন খাতে, ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া সেচেও এই তেল ব্যবহার করেন চাষিরা। সব মিলিয়ে বর্তমানে ৩০ দিনের ডিজেল মজুত আছে। পরিবহন খাতে ব্যবহৃত অকটেনের চাহিদার অর্ধেক দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি অর্ধেক আমদানি। সব মিলিয়ে বিপিসির মজুতাগারে ২২ দিনের অকটেন রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেস তেলের এবং উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের মজুত আছে ৩৮-৪০ দিনের। পেট্রোলের মাসিক গড় চাহিদা ৩৯ হাজার টনের পুরোটা দেশীয়ভাবে উৎপাদিত হয় বলে এর কোনো সংকট হয়নি। ডিজেলবাহিত তিনটি ও ফার্নেসবাহিত একটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বেশির ভাগই ফার্নেস তেল ও ডিজেল নিজস্ব উপায়ে আমদানি করে।
বিপিসি জানায়, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে সংস্থাটি অপেক্ষাকৃত বেশি দামে তেল কিনে কম দামে বিক্রি করায় দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে। এখন তেলের দাম কমতে শুরু করায় বিপিসির লোকসানও কমতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম যা এখন ৯৪ ডলার রয়েছে, তা ৮০ ডলারের আশপাশে থাকলে কোনো লোকসান গুনতে হবে না বিপিসিকে। এছাড়া ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে উত্পাদন স্থগিত ও বিদ্যুতের লোডশেডিং করায় এবং রাত ৮টার পর দোকানপাট-বিপণিবিতান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অনেকটা কার্যকর হওয়ায় জ্বালানি চাহিদা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। এমন অবস্থায় তেলের দামের নিম্নগতি বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আগের অবস্থায় ফিরে যেতে বিপিসির জন্য সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির একাধিক সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা।