সাঁথিয়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মন্দিরের প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা প্রদানের অভিযোগ

0

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার সাঁথিয়ায় মন্দিরের নামে সরকারের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়া জায়গা স্কুলের নামে দখল করে মার্কেট নির্মাণ করে মোটা টাকা হাতিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠেছেন সাঁথিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানসহ কতিপয় শিক্ষক।

এদিকে বিষয়টি হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ে দাঙ্গা বেঁধে যাওয়া রোধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তপন হায়দার সান উপজেলা প্রশাসনের দারস্ত হন। ইউএনও’র নির্দেশক্রমে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সরকারি আমিনসহ স্থানীয় সুধীজনদের উপস্থিতিতে জমি মেপে এবং আলোচনান্তে স্কুল ও মন্দির কমিটিকে মৌখিক ভাবে বুঝিয়ে দেন।

সরকারি ভাবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নেয়া ওই জায়গার ইউএনও, এসিল্যান্ড ও বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং মন্দির কমিটির লোকজনের সমঝোতার পর মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে মন্দির স্থাপনের জন্য সীমানা প্রাচীর ও ওয়াল নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। অজ্ঞাত কারণে সীমানা প্রাচীর ও ওয়াল নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে এসে বন্ধ করে দেন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিবর রহমান লিটন।

মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য রতন দাস বলেন, বিদ্যালয়ের সামনে আমরা প্রায় ৭ শতাংশ জায়গা সরকারের কাছ থেকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছি মন্দির করার জন্য। জায়গা নিয়ে স্কুল ও মন্দিরের কিছুটা সমস্যা ছিল। সরকারি প্রতিনিধিরা এসে সেই সমস্যা সমাধান করে দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে প্রধান শিক্ষক সরকারি প্রতিনিধি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে তোয়াক্কা না করেই তিনি আমাদের মন্দির নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা অবিলম্বে আমাদের জায়গায় মন্দির নির্মাণের কাজ করতে চাই।

এদিকে মন্দিরের কাজ বন্ধ করে দিয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক আজিবর রহমান লিটন কারও অনুমতি না নিয়েই গত সোমবার সাঁথিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে স্কুল বন্ধ রেখে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে উল্টো বিদ্যালয়ের সভাপতি তপন হায়দার সানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন। প্রধান শিক্ষক উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি না নিয়ে কোন কর্মসূচী করতে পারেন কিনা এ নিয়ে নানা সমালোচনার ঝড় বইছে উপজেলা জুড়ে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি তপন হায়দার সান বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর বিদ্যালয়ের উন্নয়নের স্বার্থে চারতলা ভবন, দোতলা ভবন, আধুনিক টয়লেট, সৌন্দর্য্যবর্ধন প্রধান ফটক ও শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ব্যবস্থা করেছি। নিঃস্বার্থভাবে বিদ্যালয়ের জন্য মন্দির কমিটির সাথে যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। সেটা সমাধান করেছি। মন্দিরের প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে শহীদ মিনার ও প্রধান ফটক ভাঙা পড়ে। সেটা রক্ষায় মন্দির কমিটির সাথে আলোচনা করে তাদের কাছ থেকে জায়গা নিয়ে সেগুলো রক্ষা করেছি। অথচ নিজের স্বার্থ চরিত্রার্থ করতে না পেরে আমাকে নিয়ে মিথ্যা ও মনগড়া গল্প সাজিয়ে প্রধান শিক্ষক মানববন্ধনসহ নানা অভিযোগ ছুঁড়ছেন। আমি এই কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ইউএনও, এসিল্যান্ড ও বিদ্যালয়ের সভাপতিকে পাশকাটিয়ে তিনি কিছু কাজ করেছেন এর সত্যতা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক আজিবুর রহমান লিটন বলেন, বিদ্যালয় রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিবেশ বজার ক্ষমতা প্রধান শিক্ষকের। এখানে সভাপতির কোন দায়বদ্ধতা নেই। নীতিমালার আলোকে আমি কাজ করেছি, সেখানে সভাপতিতে জানানোর প্রয়োজন বোধ করিনা। স্কুল বন্ধ রেখে মানববন্ধন করা, অনুমতি না নেয়ার বিষয়ে তিনির বলেন, আমি স্থানীয় প্রশাসনকে না জানিয়ে মন্দিরের কাজ বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তারা কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। জরুরী কাজে বাইরে থাকার কারনে উপজেলা প্রশাসনকে জানাতে পারিনি।

দোকানঘর বা মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, শুনেছি মন্দির কমিটি এখানে মার্কেট নির্মাণ করবে। তাই তাদের এখানে মার্কেট করতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে জায়গা লিজ ছুটিয়ে স্কুলের পক্ষ থেকে মার্কেট করা হবে। স্কুলের সামনে মন্দিরের মার্কেট মেনে নিতে পারবো না। মার্কেট হলে আমরা করবো। আর মন্দির করলে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। লিজ বাতিলের জন্য তিনি দৌড়ঝাঁপ করছেন বলেও দাবী করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনিরুজ্জামান বলেন, হিন্দু-মুসলিম শান্তি প্রতিষ্ঠায় স্কুল ও মন্দির সংশ্লিষ্টদের সুন্দর সমাধান দেয়া হয়েছিল। এখানে মন্দির কমিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অনেক ছাড় দিয়েছেন। অথচ অজ্ঞাত কারণে প্রধান শিক্ষক সেটি না মেনে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করছেন। যা তিনি অন্যায় ভাবে করছেন। উপজেলা প্রশাসনকে না জানিয়ে তিনি নানা কর্মসূচী ও কাজ করছেন। তাকে ডাকা হবে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.