পাবনায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : “কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অবস্থান : সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা পাবনা সদর উপজেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত হয় । প্রতীক মহিলা ও শিশু সংস্থা’র আয়োজনে এবং অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও কমনওয়েল্থ ফাউন্ডেশন এর সহযোগিতায় “প্রোমোটিং রাইটস অব গ্রাসরুটস পারসনস উইথ ডিজ্যাবিলিটিস থ্ররু কমিউনিটি-লেড ইনিসিয়েটিভ” (পিআরপিডি-সিআই) প্রকল্পের অধিনে “কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অবস্থান: সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা” শীর্ষক মতবিনিময় সভা পাবনা সদর উপজেলার শেখ শহিদুল্লাহ বাচ্চু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের নিবাহী কর্মকর্তা মো: জয়নাল আবেদিন। প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি বলেন, সমাজভিত্তিক উদ্যোগের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সরকারি ও বেসরকারি সেবা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে প্রতীক যে প্রকল্প পাবনা সদর উপজেলায় বাস্তবায়ন করছে তা প্রশংসার দাবিদার। প্রকল্প বাস্তবায়নে পাবনা সদর উপজেলার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সহযোগিতা বিগত সময়েও করা হয়েছে এবং আগামীতেও করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রতীকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় দুইটি প্রতিবন্ধীবান্ধব ওয়াশরুমে করা হয়েছে এবং একটি হেল্প ডে∙ করা হয়েছে। আগামীতে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

আয়োজক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এস এম সাইফুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন, করোনা ভাইরাস এর প্রভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের অবস্থা জানার জন্য প্রতীক পাবনাা সদর উপজেলার অর্ন্তগত ২৫৪ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সঙ্গে মুঠো ফোনে আলাপ করে একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায় যে, ৩০% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখে না। কারণ, করোনা ভাইরাস বিষয়ে প্রচার মাধ্যম প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়। জরিপে অংশ নেয়া ১৫% প্রতিবন্ধী মানুষ চেষ্টা করছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও হাত ধোয়ার অভ্যাস অনুশীলন করতে। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, টেলিভিশন, আতœীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে জানতে পারছে করোনার ভয়াবহতা ও সচেতনতা সম্পর্কে। ফলে ৮৫% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি মারাত্ম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। জরিপের তথ্য অনুসারে, লকডাউন পরিস্থিতির কারণে ৬০% কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী মানুষ উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭০% প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর বর্তমান শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কারণ, অন-লাইন শিক্ষা কার্যক্রম সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশগম্য নয়। আগামীতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চিত। তিনি করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো হচ্ছে – সরকারের শনাক্তকরণ জরিপের মাধ্যমে শনাক্তকৃত এবং শনাক্তকরণের আওতাভুক্ত হয়নি সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিবন্ধিতার ধরণ অনুসারে আলাদা করে অসহায়, দুস্থ ও কর্মহীন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তার আওতায় আনা এবং নারী, শিশু ও অধিক মাত্রার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া; যদি কোন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বা করোনা উপসর্গ দেখা দেয়, তাদের জন্য করোনা সেবা প্রদানকারী কেন্দ্র বা হাসপাতালগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান করা; যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতা পান তাদেরকে করোনা পরিস্থিতি চলাকাল পর্যন্ত সরকারের ভিজিডি, ভিজিএফসহ অন্যান্য সেবার আওতায় আনা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা; করোনা সুরক্ষা সামগ্রী মাস্ক, স্যানেটাইজারসহ সব ধরণের সুরক্ষাসামগ্রী বিনামূল্যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করা; স্বাস্থ্যসেবা প্রত্যাশী প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য টোল ফ্রি বিশেষ হটলাইন নম্বরের ব্যবস্থা করা; অন-লাইন শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বাক ও শ্রবণ এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আলাদাভাবে প্রবেশযোগ্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক ছবি ও তথ্য প্রচরণায় ইশারা ভাষা ও ব্রেইলের ব্যবহার নিশ্চিত করা; করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সরকারিভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা।
সভায় অন্যাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের জেলা সম্বয়কারী মো: আরিফুর রহমান, আসিয়াবের পরিচালক মো: আব্দুস সামাদ, প্রকাশ মানবিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো: গোলাম মোস্তফা, ওয়াইডাব্লউসিএ এর সাধারণ সম্পাদক হেনা গোস্বামী এবং প্রতিবন্ধী সদস্যদের মধ্যে থেকে বক্তব্য রাখেন আ: লতিফ, তাসমিয়া তানহা, মো:লিটন শেখ, নুরুœাহার প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও পাবনা সদর উপজেলার বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.