দুই লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকার আরএডিপি অনুমোদন
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দুই লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এতে মূল এডিপি ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বৈদেশিক সহায়তার সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমলেও সরকারি অর্থায়নের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। এ বছর শেষ হবে এমন প্রকল্পে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সংশোধন আনা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশোধিত এডিপি অনুমোদন দেন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার। সভায় প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন ব্যবস্থা অক্ষুণœ রেখে সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন।
প্রকল্প ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও ভালো করে নজর দেওয়ার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান। শীঘ্রই শেষ হবে এমন প্রকল্প দ্রুত শেষ করার কথা বলেন তিনি। দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিয়ে যেসব প্রকল্পে কর্মসংস্থান হবে এমন প্রকল্পের কাজ আগে করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। লোকবলের সংকটের কারণে যেসব অবকাঠামো বা প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারছে না, তার তালিকা প্রস্তুত করে দ্রুত নিয়োগের তাগিদ দেন। আর সব ধরনের দক্ষতা উন্নয়নে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় অর্থনৈতিক বিপদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন সরকারপ্রধান। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী জানান, অর্থনীতিতে অনেক ধরনেরই বিপদ হতে পারে। যা আগে থেকে বলা যায় না অনেক সময়। যেমন ২০০৭-৮ সালে বিশ্ব সংকটের সময় আগে থেকে বলা যায়নি। তাই সরবরাহ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একপ্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ বিল বৃদ্ধিকে খুব বেশি নয় বলে মন্তব্য করেন। বাজেট ঘাটতি সহনীয় সীমায় রাখতে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এডিপি সংশোধনের সময় ২১টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ বাড়লেও কমেছে ৩৭টি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ।আর প্রকল্পের ক্যাটাগরি ঠিক করতে মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আবার বৈঠক করে অগ্রাধিকার ঠিক করা হবে। এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো চাইলে তাদের প্রকল্পের নতুন অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি ২০২২ ২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির এডিপি আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে যা কমে দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি টাকা।
বৈদেশিক অর্থায়ন ৭৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বৈদেশিক বরাদ্দ কমছে ১৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা মূল এডিপিতে ছিল ৯৩ হাজার কোটি টাকা। সরকারের অর্থায়ন কমানো হয়নি। ১৫২৫ প্রকল্পের বিপরীতে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩৫৩টি চলমান প্রকল্প চলতি অর্থবছরেই সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময় দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে রপ্তানি-রেমিটেন্স বেড়েছে। গত আগস্ট থেকে টানা মূল্যস্ফীতি কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট থাকলেও দক্ষ নেতৃত্বে কারণে আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত ॥ আরএডিপি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ। এ খাতে বরাদ্দ প্রায় ৬১ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রায় ৩৮ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এরপরে গৃহায়ণ ও কমিউনিটি খাতে প্রায় ২৫ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা । চতুর্থ অবস্থানে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রায় ২০ হাজার ২৩১ কোটি। পঞ্চম অবস্থানে থাকা শিক্ষায় বরাদ্দ ১৮ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। আর স্বাস্থ্যে বরাদ্দ ১২ হাজার ৭৪৫ কোটি। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ খাতে প্রায় ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর কৃষিতে প্রায় ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ ॥ স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বোচ্চ প্রায় ৩৯ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। দ্বিতীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে বরাদ্দ ২৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এরপর রেলপথ মন্ত্রণালয় পেয়েছে প্রায় ১২ হাজার ৫৯৬ কোটি টাকা। পঞ্চম অবস্থানে থাকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১২ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সপ্তম হয়েছে ৯ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে।
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে বরাদ্দ বেড়েছে মাতারবাড়ি, পদ্মা রেল, মেট্রোরেল লাইন-৬ এবং রংপুর মহাসড়ক প্রকল্পে। আর বাকি ৬ মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমেছে। এসবরে মধ্যে রয়েছে রূপপুর, তৃতীয় টার্মিনাল, আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু রেলসেতু, মডেল মসজিদ এবং প্রাথমিক শিক্ষার প্রকল্প।
সভাশেষে প্রেস বিফ্রিংয়ে সংকটের সময়েও বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে বরাদ্দ কমার বিষয়ে পরিকল্পনা সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, এ বিষয়ে এনইসি সভায় আলোচনা হয়েছে।
সভায় বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পগুলোতে গতি বাড়ানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। যাতে এই সংকটের সময়ে ডলার কাজে লাগানো যায়। বিদেশিরা অনেক বিষয় যাচাই করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়ায় কিছুটা সময় লাগে বলেও জানান তিনি। প্রকল্পের ক্যাটাগরি ঠিক করতে আবার বৈঠক করা হবে বরেও জানান সচিব। আর দক্ষতা উন্নয়নের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৫২৫ প্রকল্পের সঙ্গে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের ১০২টি প্রকল্প মিলে মোট প্রকল্প দাঁড়াচ্ছে ১৬২৭টি। আর সংশোধিত এডিপিতে নতুন করে ৬৮৫টি প্রকল্পকে বরাদ্দহীনভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আর এ বছর শেষ করার জন্য ৩৪৩টি প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে।