বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা : বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছে বিআরটিএ

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানীতে গণপরিবহনে ই-টিকেট ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু না হওয়ার অভিযোগের পর বাস্তবায়নে রাস্তায় নেমেছে বিআরটিএ ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা। বেশ কিছু পরিবহন কোম্পানির বাসের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে টিকেট না দেয়ার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে উপস্থিত হন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ সমিতির নেতারা। একই স্থানে বিআরটিএর ৮ নম্বর আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পালের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবস্থান নেন। বিভিন্ন গণপরিবহন থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পরিবহন নেতা এনায়েত উল্যাহ। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ এ সময় বেশ কয়েকটি বাসে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে ই-টিকেট নিয়ে কথা বলেন। বেশ কয়েকটি বাসে যাত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। বেশিরভাগ বাসের যাত্রীরা টিকেট পাওয়ার কথা জানান। কিছু সংখ্যক যাত্রী ভাড়া নেয়ার পর কন্ডাক্টর টিকেট দেয়নি বলেও অভিযোগ করেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের টিকেট দেয়ার নির্দেশ দেন পরিবহন নেতা। সদরঘাট-মিরপুর চিড়িয়াখানা রুটের তানজিল পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে যাত্রীকে টিকেট না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এই নিয়ে কন্ডাক্টর মো. বাবু ম্যাজিস্ট্রেটের সামনেই যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই বাসটিকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করেন। যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেয়ার সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে আজিমপুর-উত্তরার দৌড় ব্রিজ রুটে চলাচলরত ‘বিকাশ পরিবহনের’ বিরুদ্ধে। এ সময় পরিবহন নেতা খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেনকে ডেকে যাত্রীদের টিকেট নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিকাশ পরিবহনের একটি বাসকে থামার জন্য সিগন্যাল দেয়ার পরও থামেনি।

বাসে টিকেট না দেয়া, টিকেটে দূরত্ব উল্লেখ না থাকা, লক্করঝক্কর বাস চালানোর বিষয়ে যাত্রীদের অভিযোগের পর খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আপনারা টিকেট ছাড়া ভাড়া দেবেন না। প্রয়োজনে ওই পরিবহন কোম্পানির এমডিকে ফোন করে জানাবেন। ই-টিকেটিং বিষয়ে স্টপেজ জটিলতা আছে। আমরা সেটা নিরসনের লক্ষ্যে বিআরটিএকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি।

পরে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, যাত্রীরা ই-টিকেটিংয়ের বিষয়ে খুবই খুশি । আমরা কিছু কিছু বাসে অভিযোগ পেয়েছি। ওইসব বাসের মালিকদের ডেকে কথা বলব। অনেক দিন পর এই সিস্টেমটা চালু করা হয়েছে, তাই স্বাভাবিক হতে একটু সময় লাগবে। মালিক সমিতির টিম কাজ করছে, আমি নিজে রাস্তায় নেমেছি। এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে রাস্তায় ওপেন ১৯ জন চেকার কাজ করছে। এখানে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সড়কে যারা আইন মানবে না তাদের গাড়ি চলাচল আমরা বন্ধ করে দেব। ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জিরো টলারেন্সে কাজ করছি। সফলতা আসবেই।

বিকাল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন বলেন, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। ৭০ শতাংশের বেশি বাসে ই-টিকেট ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অল্পদিনের মধ্যেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। চালক ও হেলপারকে সিস্টেম ফলো করতে বলি। কিন্তু অনেক সময় তারা কথা শোনে না। আজ বিকাল পরিবহনের ১২টি গাড়ি চেক করা হয়েছে, কোনো অভিযোগ পায়নি। ভিআইপি পরিবহনের যাত্রীরা বিকাল পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সমর কুমার পাল বলেন, ই-টিকেটের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। প্রায় ৩০টি বাসে টিকেটের খোঁজ নেয়া হয়। তবে এখন আমরা বাসের চালক ও কন্ডাক্টরকে সতর্ক করছি, কোনো জরিমানা করছি না। ভাড়া দিয়ে টিকেট ঠিকঠাক বুঝে নিতে যাত্রীদেরও সচেতন করার চেষ্টা করছি। অনেক সময় ভাড়া নিয়ে কন্ডাক্টররা টিকেট দিতে না চাইলে টিকেট দিতে কন্ডাক্টরকে বাধ্য করতে বলেছি। যাত্রীরা সচেতন না হলে টিকেট না দেয়াটা কন্ডাক্টরের অভ্যাসে পরিণত হবে। তানজিল পরিবহনের ওই কন্ডাক্টর যাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করায় জরিমানা করা হয়েছে। বাসের ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের সমস্যা পেলেই আমরা জরিমানা করছি। তিনটি বাসকে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলরত ৫৯টি বাস কোম্পানির ৩ হাজার ৩০৭টি বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু করে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.