ঢাবির উদ্ভাবন আশার আলোর সম্ভাবনা চামড়া খাতে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি খাত হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের চামড়া শিল্প হতে রপ্তানি দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব উপায়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত না করা, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব—প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশের ট্যানারিগুলো আন্তর্জাতিক পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স সনদ পাচ্ছে না। এ সমস্যা নিরসনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
এতে যথাযথ বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তায় ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ট্যানারি শিল্পে বাস্তবায়িত হলে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে ট্যানারিগুলোর বহুল প্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক পরিবেশগত সনদ অর্জন সম্ভব এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সরকার নির্ধারিত ১০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে করে গবেষক দল।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক সেমিনারে গবেষক দলের প্রধান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এ সব তথ্য তুলে ধরেন। লেদার ইনস্টিটিউট ও দি এশিয়া ফাউন্ডেশন এ আয়োজন করে।
এ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে ৩০% কম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে অধিকতর গুণগত মান সম্পন্ন ফিনিশড লেদার উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
মিজানুর রহমান বক্তব্যে বলেন, উদ্ভাবিত প্রক্রিয়ায় লেদারের গুণগত মান উন্নয়ন ছাড়াও ট্যানারির তরল বর্জ্যে পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক ক্রোমিয়ামের পরিমাণ ৯০% হ্রাস পায়। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষতিকারক কেমিক্যালের পরিমানও উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। অধিকন্ত এই প্রক্রিয়ায় নির্গত তরল বর্জ্যও বাহ্যিকভাবে অনেকটাই স্বচ্ছ দৃশ্যমান হয়। উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে ৩০% কেমিক্যাল খরচ এবং তরল বর্জ্য পরিশোধন ব্যয় ৫০% এরও বেশি হ্রাস পাবে যাতে ট্যানারির তরুণ বর্জ্য পরিশোধন পদ্ধতিও সহজতর হবে।
তিনি আরও বলেন, উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে কঠিন বর্জ্য থেকে কম খরচে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বায়োডিজেল এবং জৈব সার প্রস্তুত করা সম্ভব হয়েছে যা দেশের নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যতম উৎস হতে পারে। ক্রোমযুক্ত ট্যানারির কঠিন বর্জ্য (শেডিং ডাস্ট) থেকে ইতোমধ্যে লেদার শেভিং বোর্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেলে সফলভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে যা বাজারে প্রচলিত পার্টিকেল বোর্ডের চেয়ে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী। এতে করে পোলট্রিফিড, ফিশফিড, ব্রিকফিল্ড ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ক্ষতিকর ক্রোম শেভিং ডাস্টের অনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব এবং এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণও রোধ হবে।
উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে পেটেন্ট পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। গবেষণাগারের পাশাপাশি প্রগতি ট্যানারিতে বাণিজ্যিকভাবেও সফলভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা গেছে বলে জানান মিজানুর রহমান।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই উদ্ভাবনের বাণিজ্যিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাগুলো দূর করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই উদ্ভাবন ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। গবেষণায় অর্থায়ন করার জন্য উপাচার্য শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
সেমিনারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান, এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ, বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মো. শাহীন আহমেদ বক্তব্য দেন।