হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : অনলাইনে খতিয়ান সরবরাহ করে ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় ♦ ১৯২টি দেশে জমির খতিয়ান ও ম্যাপ সরবরাহ ♦ ডাকবিভাগের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ

এক সময় জমির খতিয়ান বা মৌজা ম্যাপ আনার জন্য যেতে হতো ভূমি অফিসে। সেখানে ছিল নানান হয়রানির অভিযোগ। জনগণের ভূমি বিষয়ক অসচেতনতার সুযোগে অসাধু লোকেরা হাতিয়ে নিত বাড়তি অর্থ। সেদিন আর নেই। হাতের মুঠোয় এখন ভূমিসেবা। দেশের প্রায় ৬ কোটি ‘ডিজিটাইজড’ খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপের তথ্য রয়েছে এখন অনলাইনে বা ই-পর্চা সিস্টেমে। এই ভার্চুয়াল রেকর্ড রুম থেকে এখন বিনামূল্যে নাগরিকরা পাচ্ছেন ভূমিসেবা। যে কেউ যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে অনলাইনে জমির রেকর্ডের তথ্য দেখতে পারছেন। এমনকি ঘরে বসেই খতিয়ান বা ম্যাপ সংগ্রহ করতে পারছেন নাগরিকরা। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে খতিয়ান ও ম্যাপ সংগ্রহের জন্য অনলাইন আবেদন করতে পারছেন। একইভাবে ঘরে বসে পাচ্ছেন ডেলিভারি সেবা। নাগরিকের ঠিকানায় পর্চা পৌঁছে দিচ্ছে ডাক বিভাগ। এ ছাড়া বিভিন্ন জনবহুল স্থানে কিয়স্ক স্থাপনের মাধ্যমে জনগণকে তাৎক্ষণিকভাবে পর্চা প্রিন্ট করার সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইনে আবেদন করে এ পর্যন্ত ১৯২টি দেশে বসে নিজেদের জমির খতিয়ান ও ম্যাপ সরবরাহ নিয়েছেন। এর মধ্যে ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, ভেনেজুয়েলা, সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকেরা রয়েছে। প্রবাসী বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে সরাসরি কল সেন্টারে ফোন করলে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল অথবা ই-খতিয়ান অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি আবেদন করলে ডাকবিভাগ বিদেশে প্রবাসীদের নিজ নিজ ঠিকানায় খতিয়ান পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। বর্তমানে ৫ কোটি ৫২ লাখের অধিক জমির মালিকানা এবং ৭৫ হাজারের অধিক মৌজা ম্যাপ তথ্য অনলাইনে (ই-পর্চা সিস্টেমে) রয়েছে। প্রতিনিয়ত নামজারি খতিয়ান যুক্ত হচ্ছে সিস্টেমে, এখন পর্যন্ত ৮৫ লাখের বেশি নামজারি খতিয়ান সিস্টেমে যুক্ত হয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ৪ লাখের বেশি খতিয়ানের আবেদন নিষ্পত্তি হচ্ছে। ১৬১২২ নম্বরে ফোন করে অথবা ভূমিসেবা পোর্টাল ষধহফ.মড়া.নফ অথবা ‘স্মার্ট ভূমি রেকর্ড/ই-খতিয়ান’ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে আবেদন করে ঘরে বসেই ডাকযোগে খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ পাওয়া যাচ্ছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজারের অধিক খতিয়ান এবং ৫ হাজার ৭০০-এর অধিক মৌজা ম্যাপ ডাকবিভাগের মাধ্যমে নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে ই-পর্চা সিস্টেম থেকে সরকার প্রায় ৪১ কোটি ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। এর মধ্যে ৪০ কোটির বেশি রাজস্ব এসেছে খতিয়ানের মাধ্যমে। এ ছাড়া আইনগত জটিলতা নিরসনে স্মার্ট ভূমিসেবা সিস্টেমের ডাটা এক্সেস আইন ও বিচার বিভাগের সঙ্গে শেয়ার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আদালতে বসেই জজ/ম্যাজিস্ট্রেটরা ভূমিবিষয়ক ডকুমেন্ট যাচাই করতে পারবেন। ভূমিবিষয়ক মামলা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ভূমি সচিব খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা স্মার্ট ভূমিসেবা চালু করেছি। ভূমি সেবাটা এক কথায় বলতে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছি। এতে হয়রানি কমেছে। তিনি আরও বলেন, এই সেবা যারা নিয়েছেন, তারা এই সেবা নিতে গিয়ে সুবিধা বা অসুবিধার কথা তুলে ধরে প্রচুর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। আমরাও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা ধরনের সমস্যা চিহ্নিত এবং সমাধান করেছি। তবে তিনি স্বীকার করেন এখনো অনেক নাগরিক হয়তো সেভাবে বিষয়টি জানেন না। তবে আমরা প্রচার চালাচ্ছি।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাইজেশন, নলেজ ম্যানেজমেন্ট ও পারফরমেন্স (ডিকেএমপি) অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো কোটির মতো তথ্য যুক্ত হয়নি, তবে দ্রুতই যুক্ত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ভূমি খতিয়ানের ৫টি কপি হয়। কিছু খতিয়ান অনেক জেলা অফিসে পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ মিসিং আছে। আমরা সেই মিসিং খতিয়ানগুলো সংগ্রহ করতে এখন জেলা জজ কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করব। সংগ্রহ হলেই সিস্টেমে যুক্ত হবে। এ ছাড়া মূল খতিয়ান হতে ধারাবাহিকভাবে সৃষ্ট নতুন খতিয়ান প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ফলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আসবে এবং মামলা-মোকদ্দমা কমে যাবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.