বিজিবি মোতায়েন

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল, অবরোধ সফল করার হাতিয়ার হচ্ছে চোরাগোপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাস। আর এই ধরনের চোরাগোপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাসের টার্গেট হচ্ছে যাত্রীবাহী বাস। ফের যে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে লক্ষ্যে নতুনভাবে নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে পুলিশ। সারাদেশে গত এক সপ্তাহে অর্ধ শতাধিক যাত্রী বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত। চোরাগোপ্তা হামলা করে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্তদের ধরিয়ে দিতে বিশ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

আবার কাল বুধ ও বৃহস্পতিবার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ায় নাশকতা ঠেকাতে মাঠে নামানো হয়েছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটকে। পুলিশের আইজির নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে পুলিশ ও র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও সকল গোয়েন্দা প্রধান উপস্থিত ছিলেন। চোরাগুপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাস দমন ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার কৌশল নির্ধারণে বৈঠকে আলোচনা করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা বুধ ও বৃহস্পতিবারের অবরোধ কর্মসূচির নাশকতা ঠেকাতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২২৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। সারাদেশে ৪৬০টি টহল টিম মোতায়েন করবে র‌্যাব। কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকায় দিনে-রাতে পালাক্রমে মোতায়েন করা হচ্ছে ২০ হাজার পুলিশ। পুলিশেরও রিজার্ভ ফোর্স মাঠে নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া অবরোধে যে কোনো ধরনের সহিংসতা এড়াতে সারাদেশে ৬৫ হাজার আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে। রেল, সড়ক ও নৌ পথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন রাখতে ‘অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াত’ শুরু করেছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। চোরাগুপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে অব্যাহত জ্বালাও-পোড়াও বন্ধে কাজ করবে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স।

পুলিশের আইজির নেতৃত্বে পরিবহন মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত সপ্তাহে একদিনের হরতাল ও তিনদিনের অবরোধে রাজধানীতে বিভিন্ন জায়গায় চোরাগোপ্তা হামলা হয়েছে। যাত্রীবেশে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশের নজর এড়িয়ে এসব হামলার ঘটনায় কিছুটা আতঙ্কে নগরবাসী। ফের বুধ ও বৃহস্পতিবার যে অবরোধ ডাকা হয়েছে তাতে যেন আগের মতো পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক প্রস্তুতি ও কৌশল নির্ধারণ করেছে। টানা কর্মসূচির অংশ হিসেবে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো।

গত সপ্তাহে একদিন হরতাল ও তিনদিন অবরোধের পর চলতি সপ্তাহের শুরুতেই আবারও দুই দিনের অবরোধ শেষে আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার ফের অবরোধ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর ডাকা দুই দিনের অবরোধ চলাকালে সারাদেশে ১৩টি বাসসহ মোট ১৮টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনের অবরোধে অন্তত ৩১টি গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ মোট অন্তত ৪৯টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। চোরাগুপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চোরাগোপ্তা হামলার আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে লক্ষ্যে নতুনভাবে নিরাপত্তার ছক তৈরি করেছে পুলিশ। এর অংশ হিসেবে রাজধানীতে দিনরাত দায়িত্ব পালন করছেন ২০ হাজার পুলিশ সদস্য। নাশকতা রোধে দায়িত্ব পালন করছেন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারাও। একই সঙ্গে আছে র‌্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপিসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মূলত হরতাল-অবরোধে গণপরিবহনে চোরাগোপ্তা হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনাই বেশি ঘটছে। চোরাগোপ্তা হামলা নিয়ে শঙ্কিত পুলিশও। এসব হামলা ও নাশকতা প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় এবার নেওয়া হয়েছে নতুন পরিকল্পনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে দিন ও রাতের রাজধানীকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রাজধানীতে দিনে প্রায় ১১ হাজার পুলিশ সদস্য এবং রাতে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। থানা পুলিশ, পুলিশ লাইন্সের সদস্য, ডিবিসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে নিরাপত্তার এ ছক তৈরি করেছে ডিএমপি। সাধারণত নাশকতা ও বাসে আগুন দেওয়ার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটে রাতে। বিষয়টি মাথায় রেখে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ।

পাশাপাশি রাজধানীতে যে কোনো ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে অপরাধীদের গ্রেপ্তার অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যে কোনো পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক নির্দেশ যেন পেতে পারেন, এ লক্ষ্যে এবারই প্রথম রাতে উপ-পুলিশ কমিশনাররা (ডিসি) দায়িত্ব পালন করছেন। ডিএমপির আটটি ক্রাইম ডিভিশনে একজন করে উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এ দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে নিয়মিত দায়িত্ব পালনে প্রতিদিন একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া চোরাগোপ্তা হামলা ও যানবাহন ভাঙচুর করে কেউ যেন পালিয়ে যেতে না পারে- সেজন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে সাদা পোশাকের পুলিশ।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, বর্তমানে আমাদের বড় সমস্যা চোরাগোপ্তা হামলা। যাত্রীবেশে বাসে আগুন দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এরই মধ্যে আমরা দুই জায়গা থেকে দুটি গ্রুপ গ্রেপ্তার করেছি। এসব হামলাকারীকে ধরতে আমাদের গোয়েন্দা ও পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছেন। সবমিলিয়ে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক। রাস্তায় চলছে গাড়ি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে যত ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা নিয়েছি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজধানীর নিরাপত্তা ও জনগণের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নানান পরিকল্পনা নিয়েছে ডিএমপি। এজন্য ক্রাইম ও ডিবি পুলিশের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন ডিএমপি কমিশনার অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান। বৈঠকের বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, অবরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে ডিএমপি কমিশনার বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি যে কোনো মূল্যে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধের নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও কেউ প্রমাণসহ অগ্নিসংযোগকারীকে ধরতে সহায়তা করলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন্স) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, অবরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে পোশাকধারী পুলিশ দিনে এবং রাতে দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এবার রাতের ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাতে ডিসিরা দায়িত্ব পালন করবেন। আমাদের গোয়েন্দারাও কাজ করছেন। যে কোনো তথ্য পাওয়া মাত্রই নিরাপত্তার স্বার্থে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তাতে আমরা পিছপা হবো না। তাতে যদি কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয় তবুও। নাশকতাকারীকে প্রতিরোধ করতে যত ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, ডিএমপি সব কাজ করবে।

হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছেন র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা। রাজধানীতে ৭০টি টহল দলে প্রায় ছয়শ’ র‌্যাব সদস্য বিভিন্ন সড়কে টহল দিচ্ছেন। এ ছাড়া দেশব্যাপী গোয়েন্দা নজরদারির জন্য র‌্যাবের গোয়েন্দারাও দায়িত্ব পালন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অনলাইনেও নজরদারি রাখছে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম।
র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেছেন, ঢাকাসহ সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও রুখতে র‌্যাবের টহল টিম বাড়ানো হয়েছে। সড়কে যেন যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে এবং যানবাহনকেন্দ্রিক নাশকতা কেউ যেন চালাতে না পারে সেজন্য এই টহল বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, নাশকতাকারী যেই হোক না কেন তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। মাঠ পর্যায়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সরব উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.