বিপন্ন কাপ্তাইয়ের প্রাকৃতিক বন ও পাহাড় আন্তর্জাতিক বন দিবসেও বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা থেমে নেই
মাহফুজ আলম, নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক বন দিবসেও দেশের মধ্যে অন্যতম কাপ্তাইয়ের প্রাকৃতিক বন ( ন্যাচারাল ফরেস্ট) এর একাংশের বৃক্ষ নিধন ও পাহাড় কাটা থেমে ছিলোনা। লেগ ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বন দিবস বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশেও দিবসটি ঝর্নাঢ্য আয়োজনে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উদযাপন করা হলেও কাপ্তাইয়ে দিবসটি পালন করেছে দায়সারা ভাবে এবং পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর কোন কর্মসূচি পালনের সংবাদ পাওয়া যায় নি। তবে পার্বত্য রাঙ্গামাটি দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন কাপ্তাই সীতা পাহাড় ন্যাচারাল ফরেস্ট এলাকায় অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জুমচাষের আদলে হলুদ, আদা ও কচু চাষের কারণে পার্বত্য কাপ্তাইয়ের ন্যাচারাল ফরেস্ট সহ পাহাড়গুলো বিপন্ন হওয়ার পথে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের কেহই সাক্ষাৎ এ বক্তব্য না দেয়ায় তাদের মতামত দেয়া যাযনি। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চল সমুহে নির্বিচারে পাহাড় কাটা এবং ব্যাপক মাটি ক্ষয় ও ধসের কারণে এসব পাহাড় ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অদূরভবিষ্যতে পার্বত্যাঞ্চলের পাহাড়গুলো বিলীন হয়ে যাবে। মহা বিপর্যয় ঘটতে পারে পার্বত্যঞ্চলের পরিবশের। তাই পাহাড় ও বন রক্ষায় এক্ষুনি সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বংশপরমপরায় পাহাড়ে জুম চাষ করে আসছে, অবৈজ্ঞানিক ও আদি পদ্ধতিতে। অনুসন্ধানে জানাযায়, প্রতিবছর এই দিনে পার্বত্য রাঙ্গামাটির কাপ্তাই পাহাড় বা টিলা বেছে নিয়ে জুম চাষের জন্য বন জঙ্গল কেটে সাফ করে উপজাতীয়রা। মার্চ মাসব্যাপী রোদে শুকানোর পর এপ্রিলে আগুনে পোড়ানো হয় এসব বনজঙ্গল। পরে বৃষ্টি এলে পুরো পাহাড়ের গায়ে গর্ত করে রোপন করা হয় ধান, আদা, হলুদ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন চাষাবাদ।
মৃত্তিকা বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে জুম চাষের জন্য পাহাড়গুলো অগ্নিদগ্ধ করায় মাটি শুকিয়ে ইট হয়ে যায়। এতে ছোট বড় পাহাড় টিলাগুলোতে ফাটল সৃষ্টি হয়। ফাটলে বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়ে ভয়াবহ আকারে পাহাড় ধস শুরু হয়।
ভূমি অবক্ষয় পরিবীক্ষণ সম্পর্কীত টাস্কফোর্সের পরিচালিত এক জরিপ প্রতিবেদনে জানাযায়, বাংলাদেশে পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে প্রায় ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি ক্ষয়ের মুখে। অপরিকল্পিত চাষাবাদ বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে জুম চাষকে এ ভূমি ক্ষয়ের কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। এতে আরো বলা হয় ভূমি ক্ষয়ের হার বিপজ্জনক মাত্রায় রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
পরিবেশবাদীরা বলেন , অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পার্বত্য এলাকার পাহাড়গুলোতে চাষাবাদ এভাবে অব্যাহত থাকলে মাটি ধস ও ক্ষয়ের কারণে প্রাকৃতিক বনসহ পাহাড়গুলো বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এ বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে হলে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন করে পাহাড়ের চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।