মহামূল্যবান ‘কালো ধান’ আবাদ হচ্ছে দিনাজপুরে
বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কালো বা বেগুনি ধান। চীনের সপ্তদশ শতকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মহামূল্যবান এই ধান এখন দিনাজপুরের সদর উপজেলার শংকরপুর ইউনিয়নে আবাদ হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থা মহিলা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্র (এমবিএসকে) ও কৃষি বিভাগের সহায়তায় ইউনিয়নের বনতাড়া গ্রামে কৃষক আশফাক হোসেনের জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ধানের আবাদ শুরু হয়েছে।
এমবিএসকে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চীনে চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকে মিং যুগে কালো ধানের চাষ হতো। কিন্তু রাজা বা রাজপরিবার ছাড়া কারও কালো চালের ভাত খাওয়ার অধিকার ছিল না। প্রজাদের জন্য এই চাল নিষিদ্ধ ছিল বলে এই চালকে বলা হয় নিষিদ্ধ চাল বা ফরবিডেন রাইস।
পরবর্তী সময়ে জাপান ও মিয়ানমারে এই চালের চাষ শুরু হয়। সেখান থেকে এই চাল আসে বাংলাদেশে। পার্বত্য এলাকায় এই চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। থাইল্যান্ডে একে বলে কাও নাইও ডাহম।
দিনাজপুর কৃষি বিভাগ বলছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভিনয়ের্ড বা এনথোসায়ানিন খুব বেশি পরিমাণে থাকায় এই চালের রঙ কালো হয়। এই উপাদানটির কারণে ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে প্রতিহত করতে সহায়তা করে। কালো চাল ক্যানসার প্রতিরোধে অনন্য। ধমনিতে রক্ত চলাচল কালো চালের উপাদানের কারণে উচ্চ রক্তচাপ কম হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। এই চালে আয়রন বেশি, কিন্তু শর্করা কম। আর এই চালের ভাত অনেক বেশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর।
এই চালে শর্করার পরিমাণ সাদা চালের চেয়ে কম। অন্যদিকে আঁশ ও ভিটামিন ‘বি’-এর পরিমাণ বেশি। এ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। কালো চালের ভাত খেলে হজম হয় ধীরে। ফলে অনেক সময় ধরে ক্ষুধা লাগে না। সেই সঙ্গে শরীরকে দেয় অফুরন্ত শক্তি।
বনতাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক আশফাক নিজের জমিতে কালো ধানের গাছগুলো পরিচর্যা করছেন। এই ধানের শিষ সাধারণ ধানের চেয়ে বড়। কৃষক আশফাক বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ১০ শতক জমিতে কালো ধান আবাদ করেছি। প্রচলিত ধান চাষে যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয় সে তুলনায় এই ধান চাষে সারের প্রয়োজন খুব কম। কীটনাশকও পরিমাণে কম লাগে।
দিনাজপুরের এমবিএসকে কৃষি কর্মকর্তা হোসেন মো. আবু সুফিয়ান সময়ের আলোকে বলেন, কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। এই চাল কিছু কোম্পানি প্যাকেটজাতের মাধ্যমে হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও স্থানীয়ভাবে কেজিপ্রতি ৫শ টাকায় বিক্রি হতে পারে। তবে এ চালের উৎপাদন দিনাজপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নুর হাসান বলেন, কালো চাল সাধারণ চালের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। তুলনামূলক বিচারে অ্যানথোসায়ানিন, প্রোটিন ও ফাইবার অন্যসব চালের থেকে কালো চালে বেশি থাকে। চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে। এতে থাকা ফাইবার হার্টকে রাখে সুস্থ। তিনি বলেন, সাধারণ ধানের মতোই পরিচর্যা করতে হয় এই ধানের। বাড়তি কোনো কিছুই করতে হয় না। কালো চাল দেখতে যেমন কালো, এ চালের ভাতও কালো।