নকলা প্রতিনিধি : আমাদের দেশে ভুট্টা একটি লাভবান ফসল । এ থেকে জনপ্রিয় একটি খাবার তৈরী করা হয়। ভুট্টার মোচা পুড়িয়ে খাবার প্রচলন চলে আসছে বহুকাল ধরেই। আধুনিক জীবনেও ভুট্টা তার নিজ গুণে ঠাঁই করে নিয়েছে নানা রূপে নানা স্বাদে। ভুট্টার খই এখন সকলের জনপ্রিয় খাবার । আর সকালের নাশতায় ভুট্রার তৈরি রেসপি বা জেলাপী সকলের প্রিয় খাবার। এছাড়াও ভুট্টা থেকে তৈরি হতে পারে নানা রকম রুটি, খিচুরি, ফিরনি, নাড়–সহ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার। মজাদার চাইনিজ খাবার তৈরিতে অপিহার্য কর্নফ্লাওয়ার ভুট্টারই অবদান। ভুট্টা যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে যার জুড়ি নেই। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রয়োজনীয় আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস ভুট্টা। ভুট্টার ভিটামিন এ সি ও লাইকোপিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধী ফাইবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগায়।
ভুট্টা ডায়াবেটিস ও রক্তের উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আমাদের হৃৎপি- ও কিডনির সুরক্ষা করে। চমৎকার স্বাদ আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ খাবারটি সারা বছরই তৈরী করা যায় ।অনেক বেশি এর ফলনও হয় । মানুষের খাবার শুধু নয় ভুট্টা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি কিংবা মাছের খাবার হিসেবেও উৎকৃষ্ট বলে কৃষি বৈজ্ঞানিকদের মতামত সুস্পষ্ট। হাঁস-মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভুট্টার ভাঙা দানা ব্যবহার উপযোগী । জ্বালানি হিসেবেও ভুট্টা গাছ ব্যবহার করা যায়। ভুট্টার চাহিদা এখন বাংলাদেশে ব্যাপক হারে বাড়ছে। তাই জমিতে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ অনেক বেশি। এবার মাঠ থেকেই অগ্রিম ক্রয় করে নিচ্ছেন ভুট্রা ।এক বিঘা জমির ভুট্রা গাছ সহ ক্রয় করে নিছেন ২৫ হাজার টাকায় । বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।অল্প জমি থেকে অধিক ফলন এখন কৃষকের উৎপাদনের মূল্য লক্ষ্য এবং বানিজ্যিক কৃষি ভুট্রা বলে এর চাষ প্রনালী অনেক কৃষক জেনে নিচ্ছে ।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এ পর্যন্ত ভুট্টার বেশ কিছু উন্নত জাত ও হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো সুপার সাইন ২৭৬০, অটো ৯৮৭ কে, পাইওনিয়ার পেসিফিক ৬০, শুভ্রা, বর্ণালী, মোহর, খই ভুট্টা, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩, বারি টপ ক্রস হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৬, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১, বারি বেবি কর্ন-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩। ২০১১ সাল থেকে ব্যাপক হারে বাংলাদেশে ভুট্রার আবাদ শুরু হয় । দিনে দিনে এর আবাদ বেড়েই চলেছে ।
উৎপাদনের পরিমাণ একরে ১২০মন ফলন হয় যা বিক্রি করলে কৃষক হাতে পায় ৮০ হাজার টাকা । ধান করলে হয় খরচ বাদে মাত্র ৩০ হাজার টাকা । পছন্দমতো জাত বেছে নিয়ে তা ভুট্টা চাষের উপযোগী জমিতে লাগাতে হবে। বেলে দো-আঁশ ও দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য ভালো। জমি এমন হতে হবে যেন পানি জমে না থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ভুট্টা বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো অগ্রহায়ণ মাস ।
সার ব্যবস্থাপনা ফসলের ভালো ফলনের জন্য সার ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। ভুট্টার কম্পোজিট জাতের জন্য প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ১৭২ থেকে ৩১২ কেজি এবং খরিফ মৌসুমে ২১৬ থেকে ২৬৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়।
সেচ রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ করলে ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে। বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ, ৩৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ, ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তৃতীয় সেচ এবং ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে চতুর্থ সেচ দেয়া যেতে পারে। ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় জমিতে যেন পানি জমে না থাকে । বালাই ব্যবস্থাপনা ভুট্টায় সাধারণত যেসব রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বীজ পচা ও চারা গাছের রোগ। এ রোগ দেখা দিলে ভিটাভেক্স এক করে ৩০০ মিলি গ্রাম মিশিয়ে স্পে দিতে হবে। পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেও সতর্ক হওয়া জরুরি। ভুট্টা পুষ্ট ও পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে।
সাধারণত ভুট্রার মোচা ৮০ শতাংশ পেকে গেলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যায়। ভুট্টার গড় ফলন একরে ১২০মন । জরিপে দেখা গেছে, ২০১১সালে বাংলাদেশে ভুট্রা উৎপাদন হয়েছে ১৫ লাখ মেট্রিক টন এখন উৎপাদন ৪গুন বেশি হয়েছে । শুধু মাত্র নকলা উপজেলায় যেখানে ২১০ হেক্টর জমি আবাদ হতো, এখন ১৫৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হচ্ছে সবচেয়ে খুশির খবর হলো এবার কৃষকদের প্রনোদনার মাধ্যমে বীজ ও সার বিনা মূল্যে দেওয়ায় বাংলাদেশে এবার আবাদ ৩০ ভাগ বৃদ্দি পেয়েছে ।