বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় প্রথমবারের মতো সৌদি আরবের মরু অঞ্চলের সাম্মাম ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। একই সঙ্গে করা হয়েছে বাংলা লিংক জাতের তরমুজ চাষও। এরই মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন সাম্মাম ফল ও তরমুজ চাষ প্রকল্প দেখতে এবং নতুন ফল সম্পর্কে জানতে অনেকেই ভিড় করছেন। নতুন ফল দেখতে এসে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন অনেকেই। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, উন্নতমানের বীজ ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচর্যার কারণেই সাম্মাম ফল ও তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে।
উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে দেশীয় পদ্ধতিতে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও বাংলা লিংক নামে তরমুজ চাষ করেন একই ইউনিয়নের ধাতুর পহেলা গ্রামের মো. মুস্তাকিম ও হবিগঞ্জের মাধবপুরের আমজাদ হোসেন। চাষের প্রথম বছরই ওই দুই কৃষক ব্যাপক সফলতা পান। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি থেকে যাবতীয় খরচ বাদে ৪ লাখ টাকার ওপর তাদের লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা যায়, সাম্মাম সৌদি আরবের একটি পুষ্টিকর ও মিষ্টি জাতের ফল।
এরই মধ্যে সাম্মাম ফলটি স্থানীয় মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ফলের বাইরের অংশ হলুদ আর ভিতরের অংশ লাল। বীজ বপনের দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সাম্মাম গাছে ফল আসে। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ক হয়। এ ফলটি জমির মাটির মধ্যে ও মাচা তৈরি করে চাষ করা যায়। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এ ফল মানুষের শরীরের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যা কমলার চেয়ে ২০ ভাগ বেশি। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে এ ফলে।
আরও আছে পটাশিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিঙ্ক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, ম্যালেনিয়াম প্রভৃতি। উপজেলার আদমপুর গ্রামে মো. মোস্তাকিম ও আমজাদ হোসেন সাম্মাম ফল, তরমুজসহ নানা প্রকার সবজি আবাদ করতে ২৬ বিঘা জমি বার্ষিক চুক্তিতে ইজারা নেন। সেখানে মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প নামে একটি খামার গড়ে তোলেন। ওই কৃষি প্রকল্পের মধ্যে দেশীয় পদ্ধতিতে আড়াই বিঘা জমিতে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়। বাকি জমিতে তারা নানা ধরনের সবজি চাষ করেন। সড়কের পাশে কৃষি প্রকল্প হওয়ায় আগত ছোট-বড় সবার নজর কাড়ছে। এরই মধ্যে সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। একদিকে গাছের পরিচর্যা অন্যদিকে তরমুজ ও সাম্মাম ফল কাটা শুরু হওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
তবে বিক্রিতে এই দুটি ফলে লাভ বেশি হওয়ায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতে শুরু করেছেন। এখান থেকে তারা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় বেজায় খুশি কৃষক। কৃষক মো. আমজাত হোসেন জানান, সাম্মাম ফলটি মূলত সৌদি আরবের হলেও তারা ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় পদ্ধতিতে চারা করে আবাদ করেন। আড়াই বিঘা জমির মধ্যে সাম্মাম ফল ও ১২ বিঘা জমিতে বাংলা লিংক জাতের তরমুজের প্রায় ১৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়।
সাম্মাম ফল প্রতি ১০ গ্রাম বীজ দিয়ে ১৫ শতক জমি করা যায়। একইভাবে তরমুজও। প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ করতে সেচ, বীজ, চারা রোপণ, জমি ইজারা, পরিচর্যা, সারসহ অন্যান্য খরচ হয় তাদের প্রায় ৭ লাখ টাকা। এরই মধ্যে দেড় লাখ টাকার সাম্মাম ফল বিক্রি করা হয়েছে। আর ৫০ হাজার টাকার ওপর বিক্রি হয়েছে তরমুজ। তিনি আশা করছেন আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে জমির বেশির ভাগ সাম্মাম ফল ও তরমুজ বিক্রি হবে। সব মিলিয়ে সাম্মাম ফল বিক্রি হবে ৪ লাখ টাকার ওপর। আর তরমুজ বিক্রি হবে ৭ লাখ টাকারও বেশি। খরচ বাদে এ দুই ফল থেকে ৪ লাখ টাকার ওপর আয় হবে বলে তারা আশা করছেন।
একেকটি সাম্মাম ফল দেড় থেকে দুই কেজির ওপরে হয়। পাইকারি দেড় শ এবং খুচরা ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি তরমুজ প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। উপজেলা সহকারী কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক বলেন, মূলত সাম্মাম ফলটি সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়ে থাকে। আমাদের মাটি এ চাষের জন্য উপযোগী। কৃষক মোস্তাকিম ও আমজাদ হোসেন সাম্মামের পাশাপাশি তরমুজ ও দেশীয় পদ্ধতি চাষ করে ভালো সফলতা পেয়েছেন।