পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলা কৃষি কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, বৈষম্য নীতি ও স্বজনপ্রীতি অভিযোগ উঠেছে। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন উপজেলার কৃষকরা। গত মৌসুমে গমের প্রদর্শণী করা ৬টি ইউনিয়নের কৃষকসহ গ্রুপের কৃষকদের মাঝে চলতি বছরে ফলোআপ বীজ বিতরণের কথা থাকলেও, কাউকে গমের ফলোআপের বীজ বিতরণ করা হয়নি। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
২০২১-২০২২ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো রাজস্ব খাতের গমের ফলোআপের বীজ বিতরণ করেছেন। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে গমের ১১টি প্রদর্শনী স্থাপন করলেও, উক্ত ৬ ইউনিয়নের কোন কৃষককেই ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে ফলোআপের বীজ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং খামারবাড়ি ঢাকার পরিচালক একেএম মনিরুল আলম কর্তৃক ১৬ মার্চ ২০২১ তারিখে ১২.০১.০০০০.০০৫.৪১.০১০.১৯-২০ (৪র্থ খন্ড) স্মারকে স্বাক্ষরিত ২০২০-২১ অর্থ বছরে রাজস্ব খাতের অর্থায়নে প্রদর্শনী স্থাপন ও ফলোআপ কার্যক্রম বাস্তবায়নের নীতিমালা সূত্রে জানা যায়, প্রতি ব্লকে বিদ্যমান ১২টি কৃষক গ্রুপের মাধ্যমে প্রদর্শনী ও ফলোআপ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রথম গ্রুপ, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দ্বিতীয় গ্রুপ, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তৃতীয় গ্রুপ এভাবে পর্যায়ক্রমে নতুন গ্রুপের মাধ্যমে প্রদর্শনী স্থাপন করতে হবে।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষক ও উক্ত কৃষক গ্রুপের ৩০ জন কৃষকই ২০২০-২১ অর্থ বছরে বীজ সহায়তা পাবার কথা ছিল। একইভাবে গ্রহন করণ কার্যক্রমের আওতায় ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকসহ ফসলের আনুপাতিক হারে গ্রুপের ৩০ জন কৃষকই চলমান ২০২১-২২ অর্থ বছরে বীজ সহায়তা পাওয়ার কথা ছিল।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিলচলন ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের আশরাফ হোসেন, দড়িপাড়া গ্রামের জাফর আলী, হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বাঘলবাড়ি গ্রামের মিলন হোসেন, দরাপপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন, নিমাইচড়া ইউনিয়নের চিনাভাতকুর গ্রামের ইয়ার খান সেতু, বিন্যাবাড়ি গ্রামের আজাদ, ফৈলজানা ইউনিয়নের ইদিলপুর গ্রামের জহুরুল ইসলাম, ছাইকোলা ইউনিয়নের ছাইকোলা দক্ষিণপাড়া গ্রামের আয়নাল হক, কুকড়াগাড়ি গ্রামের মোতালেব হোসেন এবং পাশর্^ডাঙ্গা ইউনিয়নের পাশর্^ডাঙ্গা গ্রামের সেলিম মাহমুদ ও মল্লিকবাইন গ্রামের খাইরুল ইসলামকে গমের প্রদর্শনী দেওয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী এ ছয়টি ইউনিয়নের ১১টি প্রদর্শনীর আওতায় প্রদর্শনী প্রাপ্ত কৃষকসহ গ্রুপের সবাই ২০২১-২২ অর্থ বছরে ফলোআপের বীজ পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ ছয় ইউনিয়নের কোন কৃষককেই গমের ফলোআপের বীজ দেওয়া হয়নি।
২০২০-২১ অর্থ বছরে গমের প্রদর্শনীপ্রাপ্ত কৃষক ছাইকোলা গ্রামের দক্ষিণপাড়া গ্রামের আয়নাল হক জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরে তিনি বা তার গ্রুপের কোন কৃষককে গমের বীজ দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ বলেন, ১১টি প্রদর্শণীর ৩৩০ জন কৃষকের জন্য তো বরাদ্দ আসে না। এবার ফলোআপ গমের বীজ বিতরণের জন্য বরাদ্দ এসেছে ১২০ জনের। আমরা সেই অনুপাতে বিতরণ করেছি। সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। আবার প্রদর্শণী কৃষক গ্রুপের মধ্যে ফলোআপ বীজ বিতরণের কথা থাকলেও, সবাইকে সেটা দিতে পারি না। কারণ অনেক কৃষক করতে চায় না। তখন গ্রুপের বাইরের কৃষকদেরও দিতে হয়। এটা নীতিমালার মধ্যে পড়ে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক সময় নীতিমালা ফলো করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান বলেন, আমি সরকারি কাজে বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসে খোঁজ নিয়ে পরে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবো।