বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : স্বাধীনতার পর কৃষিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য দুনিয়ার প্রায় সব দেশের জন্য অনুকরণীয়। জমি চাষে স্বাধীনতার আগে লাঙল এবং হালের বলদই ছিল প্রধান উপকরণ। মান্ধাতা আমলের চাষাবাদ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ছিল খাদ্যাভাবের দেশ। এমনকি মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের আমলে যখন টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত, তখনও দুর্ভিক্ষ ছিল ‘এ দেশের ললাটে ভাগ্য লিখন’। আর ব্রিটিশ আমলে দুর্ভিক্ষে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কয়েক কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে অনাহারে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সরকার খাদ্যোৎপাদনকে অগ্রাধিকার দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পর প্রথম দুই বছর বিধ্বস্ত বাংলাদেশে খাদ্যাভাব দেখা দেয়নি বৈপ্লবিক কৃষি কর্মসূচির কারণে। তবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের কেনা খাদ্য জাহাজজাত করার পরও মাঝপথ থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ১৯৭৪ সালের ভয়াবহ বন্যা-পরবর্তী সময়ে। ফলে সে বছর খাদ্যাভাব দেখা দিলেও পরের বছর উৎপাদিত হয় রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য। বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে দেশে দেশে যখন খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা, তখন বাংলাদেশে খাদ্য সংকট নেই বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী- আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যেসব দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়তে পারে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে তিনটি ফসল হচ্ছে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। স্বাধীনতার পর প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ধানের উৎপাদন ছিল দুই টন। এখন প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় টন। পাট রপ্তানিতে বিশ্বে আবারও প্রথম স্থানে ফিরেছে বাংলাদেশ। ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, সবজিতে তৃতীয়, মিঠাপানির মাছে তৃতীয়, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ, ছাগলের দুধ উৎপাদনে দ্বিতীয়, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে নবম ও আলু উৎপাদনে শীর্ষ দশে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন সন্তোষজনকহারে বাড়ানো সম্ভব হয়েছে কৃষিবান্ধব নীতির কারণে। এটিকে টেকসই পদ্ধতিতে পরিণত করতে কৃষককে স্বার্থ রক্ষায় আরও মনোযোগী হতে হবে।