আজাহার ইসলাম, ইবি: করোনা টিকা গ্রহণের লক্ষ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের পঞ্চমবারের মতো রেজিস্ট্রেশনের নির্দেশনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।
তবে সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এনিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের অবহেলারও অভিযোগ তুলেছেন। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা আবেদন করতে পারছেন না বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার (৩ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মু. আতাউর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পুণরায় রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের লক্ষ্যে (জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সহ) ইউজিসি থেকে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। যারা এর আগে নিবন্ধন করেছে তাদেরও পুরণায় সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন লিংক- (https://surokkha.gov.bd/enroll)
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. জামিনুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভ্যাক্সিন গ্রহণের লক্ষ্যে যেসব আবাসিক শিক্ষার্থীর (জাতীয় পরিচয়পত্রসহ) তালিকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে সেসব শিক্ষার্থী সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন।
এদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের চেষ্টা করা ব্যর্থ হচ্ছে। যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা আবাসিক হওয়া সত্ত্বেও আবেদন করতে পারছেন না। এনিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী কর্তৃপক্ষের অবহেলারও অভিযোগ তুলেছে।
সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসান শোভন ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘এর আগেও কয়েক ধাপে রেজিস্ট্রেশন করেছি। সুরক্ষা অ্যাপে রেজিস্ট্রেশনের বিজ্ঞপ্তি দেখার পরপরই চেষ্টা করেছি। বারবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। শুধু রেজিস্ট্রেশনই করে যাচ্ছি। টিকা পাবো কবে?’
দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফারহানা ঈশিতা ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘আমার জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এর আগে প্রথমদিকে নিবন্ধন করতে পারিনি। পরবর্তীতে জন্মসনদ দিয়ে নিবন্ধন করেছিলাম। তবে সুরক্ষা অ্যাপে জন্মসনদের কোনো অপশন নেই। টিকা নেওয়ার ইচ্ছা থাকলেও আবেদন করতে পারছি না।’
এ বিষয়ে ইউসিজির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মো. জামিনুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১ জুলাই থেকে আবেদন শুরু হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৩০ জুন থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লিস্ট ওয়েবসাইটে আপডেট করা শুরু করেছে। ওয়ান বাই ওয়ান সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই রেজিস্ট্রেশন করতে পারবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শতভাগ আবাসিক না হওয়ায় প্রায় ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকা ও কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করেন। তারা টিকা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সশরীরে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলে শিক্ষার্থীরা একই শ্রেণিকক্ষে বসে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।
এ বিষয়ে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তালহা আকাশ ক্যাম্পাসলাইভকে বলেন, ‘সুরক্ষা অ্যাপে শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন করতে বলা হয়েছে। অনাবাসিকরা বঞ্চিত হচ্ছি। ক্লাস শুরু হলে এক রুমেই ক্লাস করবো। এমনকি মেসগুলোতেও হলের চেয়ে বাজে অবস্থা। এতে করে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। তাহলে কেন শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে? আবাসিকদের পাশাপাশি অনাবাসিকদেরও দ্রুত টিকার আওতায় আনা সুব্যবস্থা করা হোক।’
প্রসঙ্গত, ২২ ফেব্রুয়ারি এক ব্রিফিংয়ে ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে ২ মার্চ ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী আবাসিক শিক্ষার্থীদের করোনার ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করতে তালিকা চেয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
পরে ১৪ মার্চ আবাসিক ও অনাবাসিক সকলের তালিকা চেয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে রেজিস্ট্রেশন কম সম্পন্ন হওয়ায় তৃতীয় বার ২৫ মে পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করে। সর্বশেষ চতুর্থ বারেরমতো ৩০ মে পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চার বার সময়সীমা বৃদ্ধি করার পরেও টিকা নিতে ৫৭ ভাগ শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৩৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করেছে ৬ হাজার ৬০৭ জন শিক্ষার্থী।