নিজস্ব প্রতিবেদক: তথ্য গোপন করে নিয়োগ বাছাই বোর্ডের সদস্য হয়ে নিজ ছোট ভাইকে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করায় কালো তালিকাভূক্ত হওয়া ও ছাত্রীর সাথে অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষক ফের আলোচনায় এসেছে। অভিযুক্ত দুই শিক্ষক নিজেদের এই অপরাধ থেকে অব্যহতি চেয়ে বর্তমান প্রশাসন বরাবর আবেদন করার পর বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এই অপরাধ থেকে তাদের অব্যহতি দিতে তোড়জোড় শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কিছু শিক্ষক।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক পদের নিয়োগ বাছাই বোর্ডের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। সেই বোর্ডে তার আপন ছোট ভাই ড. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রভাষক পদে প্রার্থী ছিলেন। বিষয়টি অধ্যাপক আরফিন জাককাানইবি কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে তথ্য গোপন করেন। ফলে বিষয়টি জানতে পেরে অধ্যাপক আরফিনকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২তম সিন্ডিকেট সভায় কালো তালিকা ভূক্ত করে। পরে অধ্যাপক আরফিন এই বিষয়টির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি চেয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে উপাচার্য তার নিকট জাককানইবির ৬২তম সিন্ডিকেট সভার ৩ নম্বর সিদ্ধান্ত সংযুক্ত করে বিষয়টির ব্যাখ্যা জনতে চায়।
ব্যাখ্যা জানতে চাওয়ায় লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক মাহবুবুল আরফিন। উপাচার্যকে দেওয়া তার লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার পত্র প্রেরণের ১ বছর ২ মাস ১৫ দিন পর আপনি আমার কাছে জাককানইবির ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বরের ৬২ তম সিন্ডিকেট সভার ৩ নং সিদ্ধান্ত সংযুক্ত করে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। ফলে আমি বিব্রত বোধ করছি ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। বিষয়টি তার জন্য মানহানিকর ও অত্যন্ত কষ্টদায়ক বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সেই সাথে ঘটনাটি উদ্দেশ্য প্রণদিত ও বড় ষড়যন্ত্র দাবি করেন। পরে চলতি বছরের গত ২০ এপ্রিল অধ্যাপক আরেফিনের লিখিত বক্তব্য গ্রহণ করে বিষয়টি থেকে তাকে অবমুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আতাউর রহমান।
এদিকে গত ২০২০ সালের জুলাইয়ে এক ছাত্রীর সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমানের অশ্লীল ফোনালাপ ফাঁস হয়। পরে সেই সময় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির পরিচালক পদ থেকে অব্যহতি দেয় তৎকালীন প্রশাসন। এরপর তার বিরুদ্ধে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। সম্প্রতি এই অপরাধ থেকে অব্যহতি পাওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করেছে সেই শিক্ষক। চলতি বছরের মার্চে বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য বরাবর নোট পাঠিয়েছে রেজিস্ট্রার। এরপ্রেক্ষিতে গত ২২ এপ্রিল আবারো বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফলে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আইন অনুষদের ডিন পরিবর্তন হওয়ায় বর্তমান ডিনকে স্থলাভিষিক্ত করেন।
এদিকে বিষয় দুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমহলে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের সাথে থাকা সিনিয়র শিক্ষকরা এই দুই শিক্ষককে বাঁচিয়ে দিতে ঈদের ছুটির পূর্বে তোড়জোড় শুরু করেছে বলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, ‘এই দুই শিক্ষককের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারীর আরো অভিযোগ রয়েছে। তারা ক্ষমতা অপব্যবহার করে বর্তমান ভিসিকে চাপ দিয়ে বা ভুল বুঝিয়ে তাদের অপরাধ থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছে।’